যিয়ারতের প্রকারভেদ :
যিয়ারত তিন প্রকার।
ক):বৈধ ও অনুমোদিত যিয়ারত : প্রত্যেক ঐ যিয়ারত যার মাধ্যমে শরয়ী উপকার হয় অথবা যার মাঝে
জাতির কল্যাণ নিহিত রয়েছে।এবং প্রত্যেক ঐ যিয়ারত যা আলাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসার উদ্দেশ্যে হয়। কখনও
তা ফরয হয়ে থাকে যেমন নিকট আত্মীয়ের যিয়ারত ; আবার কখনও মোস্তাহাব যেমন আলেমদের সাথে
সাক্ষাৎ।
এই ধরনের সাক্ষাতের কিছু উদাহরণ রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম এর হাদীসের মাঝে আমরা পাই
যার দ্বারা এর মর্যাদা বুঝা যায়। আলাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যিয়ারতের ফযীলত সম্পর্কে রাসূল সালালাহু আলাইহি
ওয়াসালাম বলেন―
من عاد مريضا, أوزار أخًا له في الله, ناداه منادٍ أن طِبتَ وطاب ممشاك, وتبوأت من الجنة গ্ধ
( الترمذي ( ١٩٣١ .্র منزلا
অর্থাৎ : যে ব্যক্তি কোন রুগীকে দেখতে গেল অথবা আলাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার কোন ভাইয়ের সাথে
সাক্ষাৎ করল কোন ঘোষণাকারী তখন ডেকে বলতে থাকে তুমি ভাল কাজ করেছ তোমার চলা শুভ হোক এবং
জানড়বাতের মাঝে তুমি তোমার একটা ঘর বানিয়ে নিয়েছ।১
খ) অবৈধ যিয়ারত:
প্রত্যেক ঐ যিয়ারত যার মাধ্যমে ধর্মীয় অথবা চারিত্রিক ক্ষতি হয়। যেমন কোন হারাম কাজের জন্য যিয়ারত
করতে যাওয়া অথবা অহেতুক কোন খেলার জন্য একত্রিত হওয়া এগুলি শরিয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ।
গ)মুবাহ যিয়ারত:
এ এমন যিয়ারত যার দ্বারা কোন ক্ষতি বা উপকার কিছুই হয় না এবং যার মাধ্যমে কোন হারাম কাজও
সঙ্ঘটিত হয় না। যেমন শুধু সময় কাটানোর জন্য যিয়ারত করা অথবা মুবাহ কথাবার্তা বলার জন্য সাক্ষাৎ করা।
কোন কোন সাক্ষাৎ আছে যা প্রকৃত পক্ষে প্রশংসনীয় এবং জায়েয কিন্তু তার সাথে এমন কিছু জড়িয়ে যায় যে
তার মূল বিধানকেই পরিবর্তন করে দেয়। যেমন সাক্ষাতের সাথে কোন অন্যায় কাজ যুক্ত হয়ে গেল। এখানে
আবশ্যক হল ঐ নিষিদ্ধ কাজটি দূর করা যাতে সাক্ষাৎ তার নিজের অবস্থানে নিজ অবস্থানে ঠিক থাকে। যদি সেই
নিষিদ্ধ কাজকে বাদ দেওয়া সম্ভব না হয় তখন উক্ত জায়েয সাক্ষাৎ নাজায়েযে পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং সাক্ষাৎ
কারীকে তা বাদ দেয়া জরুরী হয়ে যাবে।
যিয়ারতের আদব সমূহ :
যিয়ারতের অনেক আদব রয়েছে ,যেমন
১।
যিয়ারতের নিয়ত এবং উদ্দেশ্যকে সঠিক করতে হবে। যেমন আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখার নিয়ত করা
এবং তাদের অধিকার আদায় করা। অথবা আলাহর সন্তুষ্টি লাভের নিয়ত করবে বা সাক্ষাতের দ্বারা যে পুণ্য লাভ
হয় তার নিয়ত করবে। অথবা পরস্পরে উপদেশ গ্রহণের নিয়ত বা সময়কে কাজে লাগানোর নিয়ত
করা―ইত্যাদি।
২।
সাক্ষাতের জন্য যথোপযুক্ত সময় নির্ধারণ করা।পানাহারের নির্ধারিত সময়, আরাম অথবা ঘুমের সময়
সাক্ষাৎ করা উচিত নয়।অনুরূপ ভাবে কারো নির্ধারিত কোন সময় থাকে যখন কারো যিয়ারত সে পছন্দ করে না
তখন সাক্ষাতের মাধ্যমে তার উপর বোঝা চাপিয়ে দেওয়া এবং বিরক্ত করা ঠিক নয়।
৩।
যিয়ারতকারী অধিক সময় থেকে বা অন্য কোন মাধ্যমে যার সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছে তাকে বিরক্ত
করা ও তার কাজের ব্যঘাত ঘটানো উচিত নয়। হ্যাঁ যদি সাক্ষাৎকারী জানতে পারে যে, তার সাথী অধিক সময়
কাটানো অপছন্দ করেন না ,তাহলে বিলম্ব করাতে দোষ নেই। সাক্ষাৎকারীকে তার সাথীর অবস্থার প্রতি লক্ষ্য
রাখতে হবে। হয়ত সে কোন কাজে ব্যস্ত আছে বা কারো সাথে অঙ্গীকারাবদ্ধ আছে। আর এগুলি ব্যক্তির অবস্থা
দ্বারা প্রকাশ পায়, যেমন চেহারায় বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠে অথবা বারবার ঘড়ির দিকে তাকায় বা বার বার আসা
যাওয়া করতে থাকে এবং কখনও প্রকাশ্যেই বলে যে আমি ব্যস্ত। তখন সাক্ষাৎকারী অনুমতি নিয়ে বের হয়ে
আসবে।
১ তিরমিজি : ১৯৩১
৪।
সাক্ষাৎকারী সাজ গোজ করে পরিপাটি হয়ে যিয়ারতে আসবে,সাথে সাথে নিজ পোশাক-পরিচ্ছদ এবং
বেশ-ভূসা বিন্যস্ত করে নিবে। সুগন্ধি ব্যবহার করে নিজের দুর্গন্ধ দূর করবে। আবুল আলিয়া বলেন-
.্র إذا استأذن أحدكم ثلاثا فلَم يؤذَن له فليرجع
অর্থাৎ মুসলমানরা যখন সাক্ষাতে যেতেন তখন সাজগোজ করতেন।
৫।
স্বাক্ষাতপ্রার্থী অনুমতি প্রার্থনা করলে স্বাক্ষাতদাতার অনুমতি দেয়া ও না দেয়া উভয়টিরই অধিকার
রয়েছে।এখন যদি তিনি স্বাক্ষাতের অনুমতি না দিয়ে অপারগতা প্রকাশ করেন তাহলে স্বাক্ষাতপ্রার্থীর সেটি
সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহন করা ও মনে কষ্ট নেয়া বা তার সম্পর্কে মনে বিরুপ ভাব পোষন করা ঠিক হবে না।কারণ
কখনো কখনো সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এরূপ করতে হয়।
আলাহ বলেন―
﴾ وَإِنْ قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا هُوَ أَزْكَى لَكُمْ. ﴿النور: ٢٨
তোমাদেরকে যদি বলা হয় ফিরে যাও, তবে ফিরে যাবে। এটি তোমাদের জন্য পবিত্রতর।২
কাতাদাহ রা. বলেন: কোন কোন মুহাজির বলেছেন: সারা জীবন (অন্তত একবারের হন্যে হলেও) এই
আয়াতের উপর আমল করতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি; আমার কোন ভাইয়ের নিকট প্রবেশের অনুমতি চেয়েছি
অতঃপর তিনি বলেছেন ফিরে যাও আমি ফিরে এসেছি আর আমার হৃদয় তার উপর সন্তুষ্ট ।
৬।
সাক্ষাৎকারীর কর্তব্য হল: ঘরে প্রবেশ করে দৃষ্টি সংযত রাখবে, কানের হেফাজত করবে এবং অসংগত ও
অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে প্রশড়ব করবে না। বাড়িওয়ালা যেখানে বসতে বলবে সেখানে বসবে তার অনুমতি ছাড়া বের
হবে না। যখন বের হবে সালাম দেবে।
৭।
অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত অন্যের বাড়িতে প্রবেশ করা কারো পক্ষেই জায়েয নেই। আলাহ তাআলা
বলেন―
﴾ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا. ﴿النور : ٢٧
অর্থাৎ, হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্যদের গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং
তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ করো না।
রসুল(সঃ) বলেন,
( إذا استأذن أحدكم ثلاثا فلم يؤذن له فليرجع. البخاري ( ٥٧٧٦
তোমাদের কেউ তিনবার অনুমতি চাওয়ার পর অনুমতি না মিললে ফিরে আসবে।৪
অনুমতি চাওয়ার এ বিধান আরোপের তাৎপর্য :
ক) ঐ সময় বাড়িতে কারও প্রবেশ করা হয়ত বাড়িওয়ালাদের জন্য কষ্টের কারণ হতে পারে , তাই অনুমতি
চাওয়ার এ বিধান দেয়া হয়েছে যাতে বাড়িওয়ালা অবাঞ্চিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া থেকে বেচে যেতে পারে।
খ) এর মাধ্যমে ঘরের গোপন বিষয়গুলি সংরক্ষিত থাকবে। ঘরের লোকদের পর্দা হবে।
গ) অনুমতি প্রার্থনা দ্বারা, হঠাৎ প্রবেশের মাধ্যমে ঘরের লোকদের ঘাবড়ে যাওয়া থেকে নিরাপত্তা লাভ হয়।
৮।
অনুমতি প্রার্থনার গুরুত্ব অনেক আর তাই তার কিছু আদব এবং বিধান রয়েছে :
ক) অনুমতি প্রার্থনার বৈধ পদ্ধতি হচ্ছে তিনবার প্রার্থনা করবে , যদি অনুমতি দেয় তো প্রবেশ করবে
অন্যথায় ফিরে আসবে। অনুমতি প্রার্থনার সময় একবার অনুমতি চাওয়ার পর পাওয়া না গেলে সামান্য বিরতি
দিয়ে পরের বার চাইবে।অর্থাৎ মাঝখানে কিছু সময় বিরতি দিয়ে অনুমতি চাইবে।
খ) অনুমতি প্রার্থনাকারীর দরজায় কড়াঘাত বা শব্দকরে ডাক দেয়াটা অত্যন্ত ভদ্রচিত ও কমলতার সাথে
হওয়া বাঞ্চনিয়। রসুল(সঃ) বলেন :―
( مسلم ( ٤٦٩٨ .্র إن الرفق لا يكون في شيء إلا زانه, ولا يُنزَع من شيء إلا شانه গ্ধ
২ নুর-২৮
৩ নুর ২৭
৪ বোখারি : ৫৭৭৬
কমলতা ও নম্রতা যার সাথেই যুক্ত হবে সেই সুন্দর ও মর্যাদাবান হবে , আর যার থেকে উঠিয়ে নেয়া হবে
সেই অসুন্দর ও অসম্মানিত হবে।৫
গ) যখন বলা হবে: দরজায় কে ? বলবে! অমুকের পুত্র অমুক নিজের ঐ নাম বলবে যার দ্বারা সহজে চেনা
যায়। বলবে না ‘আমি’।
কেননা এই শব্দ প্রত্যেকের উপর বর্তায়। সে বুঝতে পারবে না যে কে দরজা নাড়া
দিচ্ছে।
وفي حديث جابر أنه طرق على النبيrكأنه ্র أنا أنا গ্ধ : فقلت: أنا, فقال ?্র من ذا গ্ধ : الباب, فقال
( كرهها. مسلم ( ٤٠١٢
জাবের রা.-এর হাদীসে এসেছে তিনি নবীর দরজা নাড়া দিলেন নবী বললেন―কে? আমি বললাম (আমি)
নবীজী বললেন ‘আমি’ ‘আমি’।
মনে হয় তিনি অপছন্দ করলেন।৬
ঘ) অনুমতি প্রার্থনাকারী দরজার একেবারে সামনে দাঁড়াবে না, ডানে অথবা বামে সরে দাঁড়াবে, দরজা
খুললেই যাতে বাড়ির ভিতরের অবস্থা সামনে এসে না পড়ে।
ঙ)অনুমতি প্রার্থনার বিষয়টি ব্যাপক, প্রত্যেকের জন্যেই সর্বাবস্থায় এটি প্রযোজ্য। সুতরাং কেউ যদি নিজের
পিতার ঘরে বা মায়ের ঘরে বা বোনের ঘরে প্রবেশ করতে চায় তখনও অনুমতি নিতে হবে।
চ) অনুমতি প্রার্থনার ক্ষেত্রে নারীরাও পুরুষের মত, উভয়ের জন্যে একই বিধান প্রযোজ্য।অনেক নারীরা এ
ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন করে থাকেন, ঘরে অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করেন। এটি মানুষের মাঝে বহুল প্রচলিত
ভুলের মধ্য থেকে একটি।
৫ মুসলিম : ৪৬৯৮
৬ মুসলিম : ৪০১২
ক):বৈধ ও অনুমোদিত যিয়ারত : প্রত্যেক ঐ যিয়ারত যার মাধ্যমে শরয়ী উপকার হয় অথবা যার মাঝে
জাতির কল্যাণ নিহিত রয়েছে।এবং প্রত্যেক ঐ যিয়ারত যা আলাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসার উদ্দেশ্যে হয়। কখনও
তা ফরয হয়ে থাকে যেমন নিকট আত্মীয়ের যিয়ারত ; আবার কখনও মোস্তাহাব যেমন আলেমদের সাথে
সাক্ষাৎ।
এই ধরনের সাক্ষাতের কিছু উদাহরণ রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম এর হাদীসের মাঝে আমরা পাই
যার দ্বারা এর মর্যাদা বুঝা যায়। আলাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যিয়ারতের ফযীলত সম্পর্কে রাসূল সালালাহু আলাইহি
ওয়াসালাম বলেন―
من عاد مريضا, أوزار أخًا له في الله, ناداه منادٍ أن طِبتَ وطاب ممشاك, وتبوأت من الجنة গ্ধ
( الترمذي ( ١٩٣١ .্র منزلا
অর্থাৎ : যে ব্যক্তি কোন রুগীকে দেখতে গেল অথবা আলাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার কোন ভাইয়ের সাথে
সাক্ষাৎ করল কোন ঘোষণাকারী তখন ডেকে বলতে থাকে তুমি ভাল কাজ করেছ তোমার চলা শুভ হোক এবং
জানড়বাতের মাঝে তুমি তোমার একটা ঘর বানিয়ে নিয়েছ।১
খ) অবৈধ যিয়ারত:
প্রত্যেক ঐ যিয়ারত যার মাধ্যমে ধর্মীয় অথবা চারিত্রিক ক্ষতি হয়। যেমন কোন হারাম কাজের জন্য যিয়ারত
করতে যাওয়া অথবা অহেতুক কোন খেলার জন্য একত্রিত হওয়া এগুলি শরিয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ।
গ)মুবাহ যিয়ারত:
এ এমন যিয়ারত যার দ্বারা কোন ক্ষতি বা উপকার কিছুই হয় না এবং যার মাধ্যমে কোন হারাম কাজও
সঙ্ঘটিত হয় না। যেমন শুধু সময় কাটানোর জন্য যিয়ারত করা অথবা মুবাহ কথাবার্তা বলার জন্য সাক্ষাৎ করা।
কোন কোন সাক্ষাৎ আছে যা প্রকৃত পক্ষে প্রশংসনীয় এবং জায়েয কিন্তু তার সাথে এমন কিছু জড়িয়ে যায় যে
তার মূল বিধানকেই পরিবর্তন করে দেয়। যেমন সাক্ষাতের সাথে কোন অন্যায় কাজ যুক্ত হয়ে গেল। এখানে
আবশ্যক হল ঐ নিষিদ্ধ কাজটি দূর করা যাতে সাক্ষাৎ তার নিজের অবস্থানে নিজ অবস্থানে ঠিক থাকে। যদি সেই
নিষিদ্ধ কাজকে বাদ দেওয়া সম্ভব না হয় তখন উক্ত জায়েয সাক্ষাৎ নাজায়েযে পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং সাক্ষাৎ
কারীকে তা বাদ দেয়া জরুরী হয়ে যাবে।
যিয়ারতের আদব সমূহ :
যিয়ারতের অনেক আদব রয়েছে ,যেমন
১।
যিয়ারতের নিয়ত এবং উদ্দেশ্যকে সঠিক করতে হবে। যেমন আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখার নিয়ত করা
এবং তাদের অধিকার আদায় করা। অথবা আলাহর সন্তুষ্টি লাভের নিয়ত করবে বা সাক্ষাতের দ্বারা যে পুণ্য লাভ
হয় তার নিয়ত করবে। অথবা পরস্পরে উপদেশ গ্রহণের নিয়ত বা সময়কে কাজে লাগানোর নিয়ত
করা―ইত্যাদি।
২।
সাক্ষাতের জন্য যথোপযুক্ত সময় নির্ধারণ করা।পানাহারের নির্ধারিত সময়, আরাম অথবা ঘুমের সময়
সাক্ষাৎ করা উচিত নয়।অনুরূপ ভাবে কারো নির্ধারিত কোন সময় থাকে যখন কারো যিয়ারত সে পছন্দ করে না
তখন সাক্ষাতের মাধ্যমে তার উপর বোঝা চাপিয়ে দেওয়া এবং বিরক্ত করা ঠিক নয়।
৩।
যিয়ারতকারী অধিক সময় থেকে বা অন্য কোন মাধ্যমে যার সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছে তাকে বিরক্ত
করা ও তার কাজের ব্যঘাত ঘটানো উচিত নয়। হ্যাঁ যদি সাক্ষাৎকারী জানতে পারে যে, তার সাথী অধিক সময়
কাটানো অপছন্দ করেন না ,তাহলে বিলম্ব করাতে দোষ নেই। সাক্ষাৎকারীকে তার সাথীর অবস্থার প্রতি লক্ষ্য
রাখতে হবে। হয়ত সে কোন কাজে ব্যস্ত আছে বা কারো সাথে অঙ্গীকারাবদ্ধ আছে। আর এগুলি ব্যক্তির অবস্থা
দ্বারা প্রকাশ পায়, যেমন চেহারায় বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠে অথবা বারবার ঘড়ির দিকে তাকায় বা বার বার আসা
যাওয়া করতে থাকে এবং কখনও প্রকাশ্যেই বলে যে আমি ব্যস্ত। তখন সাক্ষাৎকারী অনুমতি নিয়ে বের হয়ে
আসবে।
১ তিরমিজি : ১৯৩১
৪।
সাক্ষাৎকারী সাজ গোজ করে পরিপাটি হয়ে যিয়ারতে আসবে,সাথে সাথে নিজ পোশাক-পরিচ্ছদ এবং
বেশ-ভূসা বিন্যস্ত করে নিবে। সুগন্ধি ব্যবহার করে নিজের দুর্গন্ধ দূর করবে। আবুল আলিয়া বলেন-
.্র إذا استأذن أحدكم ثلاثا فلَم يؤذَن له فليرجع
অর্থাৎ মুসলমানরা যখন সাক্ষাতে যেতেন তখন সাজগোজ করতেন।
৫।
স্বাক্ষাতপ্রার্থী অনুমতি প্রার্থনা করলে স্বাক্ষাতদাতার অনুমতি দেয়া ও না দেয়া উভয়টিরই অধিকার
রয়েছে।এখন যদি তিনি স্বাক্ষাতের অনুমতি না দিয়ে অপারগতা প্রকাশ করেন তাহলে স্বাক্ষাতপ্রার্থীর সেটি
সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহন করা ও মনে কষ্ট নেয়া বা তার সম্পর্কে মনে বিরুপ ভাব পোষন করা ঠিক হবে না।কারণ
কখনো কখনো সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এরূপ করতে হয়।
আলাহ বলেন―
﴾ وَإِنْ قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا هُوَ أَزْكَى لَكُمْ. ﴿النور: ٢٨
তোমাদেরকে যদি বলা হয় ফিরে যাও, তবে ফিরে যাবে। এটি তোমাদের জন্য পবিত্রতর।২
কাতাদাহ রা. বলেন: কোন কোন মুহাজির বলেছেন: সারা জীবন (অন্তত একবারের হন্যে হলেও) এই
আয়াতের উপর আমল করতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি; আমার কোন ভাইয়ের নিকট প্রবেশের অনুমতি চেয়েছি
অতঃপর তিনি বলেছেন ফিরে যাও আমি ফিরে এসেছি আর আমার হৃদয় তার উপর সন্তুষ্ট ।
৬।
সাক্ষাৎকারীর কর্তব্য হল: ঘরে প্রবেশ করে দৃষ্টি সংযত রাখবে, কানের হেফাজত করবে এবং অসংগত ও
অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে প্রশড়ব করবে না। বাড়িওয়ালা যেখানে বসতে বলবে সেখানে বসবে তার অনুমতি ছাড়া বের
হবে না। যখন বের হবে সালাম দেবে।
৭।
অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত অন্যের বাড়িতে প্রবেশ করা কারো পক্ষেই জায়েয নেই। আলাহ তাআলা
বলেন―
﴾ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا. ﴿النور : ٢٧
অর্থাৎ, হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্যদের গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং
তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ করো না।
রসুল(সঃ) বলেন,
( إذا استأذن أحدكم ثلاثا فلم يؤذن له فليرجع. البخاري ( ٥٧٧٦
তোমাদের কেউ তিনবার অনুমতি চাওয়ার পর অনুমতি না মিললে ফিরে আসবে।৪
অনুমতি চাওয়ার এ বিধান আরোপের তাৎপর্য :
ক) ঐ সময় বাড়িতে কারও প্রবেশ করা হয়ত বাড়িওয়ালাদের জন্য কষ্টের কারণ হতে পারে , তাই অনুমতি
চাওয়ার এ বিধান দেয়া হয়েছে যাতে বাড়িওয়ালা অবাঞ্চিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া থেকে বেচে যেতে পারে।
খ) এর মাধ্যমে ঘরের গোপন বিষয়গুলি সংরক্ষিত থাকবে। ঘরের লোকদের পর্দা হবে।
গ) অনুমতি প্রার্থনা দ্বারা, হঠাৎ প্রবেশের মাধ্যমে ঘরের লোকদের ঘাবড়ে যাওয়া থেকে নিরাপত্তা লাভ হয়।
৮।
অনুমতি প্রার্থনার গুরুত্ব অনেক আর তাই তার কিছু আদব এবং বিধান রয়েছে :
ক) অনুমতি প্রার্থনার বৈধ পদ্ধতি হচ্ছে তিনবার প্রার্থনা করবে , যদি অনুমতি দেয় তো প্রবেশ করবে
অন্যথায় ফিরে আসবে। অনুমতি প্রার্থনার সময় একবার অনুমতি চাওয়ার পর পাওয়া না গেলে সামান্য বিরতি
দিয়ে পরের বার চাইবে।অর্থাৎ মাঝখানে কিছু সময় বিরতি দিয়ে অনুমতি চাইবে।
খ) অনুমতি প্রার্থনাকারীর দরজায় কড়াঘাত বা শব্দকরে ডাক দেয়াটা অত্যন্ত ভদ্রচিত ও কমলতার সাথে
হওয়া বাঞ্চনিয়। রসুল(সঃ) বলেন :―
( مسلم ( ٤٦٩٨ .্র إن الرفق لا يكون في شيء إلا زانه, ولا يُنزَع من شيء إلا شانه গ্ধ
২ নুর-২৮
৩ নুর ২৭
৪ বোখারি : ৫৭৭৬
কমলতা ও নম্রতা যার সাথেই যুক্ত হবে সেই সুন্দর ও মর্যাদাবান হবে , আর যার থেকে উঠিয়ে নেয়া হবে
সেই অসুন্দর ও অসম্মানিত হবে।৫
গ) যখন বলা হবে: দরজায় কে ? বলবে! অমুকের পুত্র অমুক নিজের ঐ নাম বলবে যার দ্বারা সহজে চেনা
যায়। বলবে না ‘আমি’।
কেননা এই শব্দ প্রত্যেকের উপর বর্তায়। সে বুঝতে পারবে না যে কে দরজা নাড়া
দিচ্ছে।
وفي حديث جابر أنه طرق على النبيrكأنه ্র أنا أنا গ্ধ : فقلت: أنا, فقال ?্র من ذا গ্ধ : الباب, فقال
( كرهها. مسلم ( ٤٠١٢
জাবের রা.-এর হাদীসে এসেছে তিনি নবীর দরজা নাড়া দিলেন নবী বললেন―কে? আমি বললাম (আমি)
নবীজী বললেন ‘আমি’ ‘আমি’।
মনে হয় তিনি অপছন্দ করলেন।৬
ঘ) অনুমতি প্রার্থনাকারী দরজার একেবারে সামনে দাঁড়াবে না, ডানে অথবা বামে সরে দাঁড়াবে, দরজা
খুললেই যাতে বাড়ির ভিতরের অবস্থা সামনে এসে না পড়ে।
ঙ)অনুমতি প্রার্থনার বিষয়টি ব্যাপক, প্রত্যেকের জন্যেই সর্বাবস্থায় এটি প্রযোজ্য। সুতরাং কেউ যদি নিজের
পিতার ঘরে বা মায়ের ঘরে বা বোনের ঘরে প্রবেশ করতে চায় তখনও অনুমতি নিতে হবে।
চ) অনুমতি প্রার্থনার ক্ষেত্রে নারীরাও পুরুষের মত, উভয়ের জন্যে একই বিধান প্রযোজ্য।অনেক নারীরা এ
ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন করে থাকেন, ঘরে অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করেন। এটি মানুষের মাঝে বহুল প্রচলিত
ভুলের মধ্য থেকে একটি।
৫ মুসলিম : ৪৬৯৮
৬ মুসলিম : ৪০১২