মহান আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন

الذين يقيمون الصلوة ومما رزقنهم ينفقون- اولئك هم المومنون حقا- لهم درجت عند ربهم ومغفرة ورزق كريم-

‘‘যারা নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে ব্যয় করে। তারা হল সত্যিকার ঈমানদার। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মান জনক রিযিক। [ সূরা আনফাল-৩-৪]

Pages

তায়াম্মুম সম্পর্কিত মাসআলা


Untitled document

التيمم -এর পারিভাষিক অর্থ- আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট নিয়মে পবিত্র মাটি দ্বারা মুখমন্ডল ও উভয় হাত মাসাহ করার নাম তায়াম্মুম।[1]

التيمم -এর হুকুম : তায়াম্মুম ইসলামী শরী‘আতে জায়েয, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মাতে মুহাম্মাদীর জন্য বিশেষ ছাড়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَاءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ مِنْهُ مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَكِنْ يُرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ-

‘আর যদি তোমরা অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসাহ কর। আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নে‘মত তোমাদের উপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর’ (মায়েদাহ  ৬)

হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الصَّعِيْدُ الطَّيِّبُ وَضُوْءُ الْمُسْلِمِ وَإِنْ لَمْ يَجِدِ الْمَاءَ عَشْرَ سِنِيْنَ.

আবু যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘পবিত্র মাটি মুসলমানের জন্য পবিত্রকারী, যদিও সে দশ বছর পানি না পায়’।[2]

অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فُضِّلْنَا عَلَى النَّاسِ بِثَلاَثٍ جُعِلَتْ صُفُوْفُنَا كَصُفُوْفِ الْمَلاَئِكَةِ وَجُعِلَتْ لَنَا الأَرْضُ كُلُّهَا مَسْجِدًا وَجُعِلَتْ تُرْبَتُهَا لَنَا طَهُوْرًا إِذَا لَمْ نَجِدِ الْمَاءَ.

হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘সমগ্র মানব জাতির উপর আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে তিনটি বিষয়ে। আমাদের সারিকে করা হয়েছে ফেরেশতাদের সারির ন্যায়। সমস্ত ভূমন্ডলকে আমাদের জন্য সিজদার স্থান করা হয়েছে এবং মাটিকে করা হয়েছে আমাদের জন্য পবিত্রকারী, যখন আমরা পানি না পাই’।[3]

তায়াম্মুম ছহীহ হওয়ার পূর্বশর্ত সমূহ :

(ক) النية অর্থাৎ পানি না পেলে অযূর পরিবর্তে ছালাতের জন্য তায়াম্মুম-এর নিয়ত করা। কেননা তায়াম্মুম একটি ইবাদত, যা নিয়ত ছহীহ হওয়ার উপর নির্ভরশীল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى ‘নিশ্চয়ই প্রতিটি কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পায়’।[4] তবে ফরয ছালাতের নিয়তে তায়াম্মুম করতে হবে, তাহ’লে তাতে নফল এবং কাযা ছালাত আদায় করা বৈধ হবে। পক্ষান্তরে যদি নফল ছালাতের নিয়তে তায়াম্মুম করা হয় তাহ’লে তাতে ফরয ছালাত ছহীহ হবে না।[5] যেমন কেউ যদি তাহাজ্জুদ ছালাতের জন্য তায়াম্মুম করে, তাহ’লে ঐ তায়াম্মুম দ্বারা ফজরের ফরয ছালাত আদায় করা ছহীহ হবে না।

(খ) الإسلام অর্থাৎ ব্যক্তিকে মুসলিম হ’তে হবে। কেননা তায়াম্মুম হ’ল ইবাদত, যা কোন কাফিরের নিকট হ’তে আল্লাহ তা‘আলা গ্রহণ করবেন না।

(গ) العقل অর্থাৎ জ্ঞান সম্পন্ন হ’তে হবে। কেননা পাগল এবং অজ্ঞান ব্যক্তির উপর ইবাদত ওয়াজিব নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,  

رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلاَثَةٍ عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ وَعَنِ الصَّبِىِّ حَتَّى يَحْتَلِمَ وَعَنِ الْمَجْنُوْنِ حَتَّى يَعْقِلَ.

‘তিন শ্রেণীর ব্যক্তির উপর থেকে আল্লাহ তা‘আলা কলম উঠিয়ে নিয়েছেন। ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ পর্যন্ত সে জাগ্রত না হয়। শিশু, যতক্ষণ পর্যন্ত তার স্বপ্ন দোষ না হয় এবং পাগল, যতক্ষণ তার জ্ঞান ফিরে না আসে’।[6]

(ঘ) পানি ব্যবহারে অক্ষমতার শারঈ ওযর থাকা। অর্থাৎ শারঈ ওযরের কারণে পানি ব্যবহারে অক্ষম হ’লে তার উপর তায়াম্মুম করা ওয়াজিব। আর এই অক্ষমতা কয়েকভাবে হ’তে পারে। যেমন-

১- পানি না পাওয়া। অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি ছালাতের সময় ওযূ করার জন্য পানি না পায়, তাহ’লে সে ব্যক্তি পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করতে পারবে। পানি বিদ্যমান থাকলে তার উপর তায়াম্মুম করা জায়েয নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَلَمْ تَجِدُوْا مَاءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ مِنْهُ ‘অতঃপর যদি পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসাহ কর’ (মায়েদা ৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, الصَّعِيْدُ الطَّيِّبُ وَضُوْءُ الْمُسْلِمِ وَإِنْ لَمْ يَجِدِ الْمَاءَ عَشْرَ سِنِيْنَ. ‘পবিত্র মাটি মুসলমানের জন্য পবিত্রকারী, যদিও সে দশ বছর পানি না পায়’।[7]

২- অসুস্থতা বৃদ্ধি কিংবা সুস্থতা লাভ করতে বিলম্ব হওয়ার আশংকা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى ‘আর যদি তোমরা অসুস্থ থাক, (তবে তায়াম্মুম করতে পার)। হাদীছে এসেছে,

عَنْ جَابِرٍ قَالَ خَرَجْنَا فِيْ سَفَرٍ فَأَصَابَ رَجُلاً مِنَّا حَجَرٌ فَشَجَّهُ فِيْ رَأْسِهِ ثُمَّ احْتَلَمَ فَسَأَلَ أَصْحَابَهُ فَقَالَ هَلْ تَجِدُوْنَ لِيْ رُخْصَةً فِيْ التَّيَمُّمِ فَقَالُوْا مَا نَجِدُ لَكَ رُخْصَةً وَأَنْتَ تَقْدِرُ عَلَى الْمَاءِ، فَاغْتَسَلَ فَمَاتَ فَلَمَّا قَدِمْنَا عَلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أُخْبِرَ بِذَلِكَ، فَقَالَ قَتَلُوْهُ قَتَلَهُمُ اللهُ أَلاَّ سَأَلُوْا إِذْ لَمْ يَعْلَمُوْا فَإِنَّمَا شِفَاءُ الْعِىِّ السُّؤَالُ إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيْهِ أَنْ يَتَيَمَّمَ وَيَعْصِرَ.  

জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমরা এক সফরে বের হ’লাম। হঠাৎ আমাদের একজনের মাথায় একটা পাথরের চোট লাগল এবং তার মাথা জখম করে দিল। অতঃপর তার স্বপ্নদোষ হ’ল এবং সে তার সাথীদেরকে জিজ্ঞেস করল, তোমরা কি এ অবস্থায় আমার জন্য তায়াম্মুমের অনুমতি আছে বলে মনে কর? তারা বলল, আমরা তোমার জন্য অনুমতি আছে বলে মনে করি না। কেননা তুমি পানি পাচ্ছ। সুতরাং সে গোসল করল আর এতে সে মারা গেল। অতঃপর আমরা যখন নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকটে আসলাম, তখন তাঁকে এই সংবাদ দেওয়া হ’ল। তিনি বললেন, ‘তারা তাকে হত্যা করেছে, আল্লাহ তাদেরকে হত্যা করুন। তারা যখন জানে না তখন অন্যদেরকে জিজ্ঞেস করল না কেন? কেননা অজানা রোগের চিকিৎসাই হচ্ছে জিজ্ঞেস করা। অথচ তার জন্য যথেষ্ট ছিল, তায়াম্মুম করা এবং তার জখমের উপর একটি পট্টি বাঁধা’।[8]

অতএব পানি ব্যবহারের কারণে রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার অশংকা থাকলে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করা বৈধ।

৩- প্রচন্ড শীতে পানি ব্যবহারের কারণে শারীরিক ক্ষতি অথবা মৃত্যুর ভয় করলে। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ احْتَلَمْتُ فِيْ لَيْلَةٍ بَارِدَةٍ فِيْ غَزْوَةِ ذَاتِ السَّلاَسِلِ فَأَشْفَقْتُ إِنِ اغْتَسَلْتُ أَنْ أَهْلِكَ فَتَيَمَّمْتُ ثُمَّ صَلَّيْتُ بِأَصْحَابِيْ الصُّبْحَ، فَذَكَرُوْا ذَلِكَ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا عَمْرُو صَلَّيْتَ بِأَصْحَابِكَ وَأَنْتَ جُنُبٌ. فَأَخْبَرْتُهُ بِالَّذِيْ مَنَعَنِيْ مِنَ الاِغْتِسَالِ وَقُلْتُ إِنِّيْ سَمِعْتُ الله يَقُوْلُ (وَلاَ تَقْتُلُوْا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا) فَضَحِكَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَلَمْ يَقُلْ شَيْئًا.

আমর ইবনুল আছ (রাঃ) বলেন, যাতু সালাসিলের যুদ্ধের সময় একদা শীতের রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়। আমার আশংকা হ’ল যে, যদি এই সময় আমি গোসল করি তবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। আমি তায়াম্মুম করে আমার সাথীদের সাথে ফজরের ছালাত আদায় করি। প্রত্যাবর্তনের পর আমার সঙ্গী- সাথীরা এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে অবহিত করেন। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, হে আমর! তুমি নাপাক অবস্থায় তোমার সাথীদের সাথে ছালাত আদায় করলে? তখন আমি তাঁকে আমার গোসল করার অক্ষমতার কথা জানালাম এবং বললাম, আমি আল্লাহ তা‘আলাকে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান’ (নিসা ২৯)। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুচকি হাসি দিলেন ও কিছুই বললেন না।[9]

(ঙ) পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা। অর্থাৎ যে মাটির সাথে পেশাব-পায়খানা মিশ্রিত হয়েছে, সেই মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ مِنْهُ ‘পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসাহ কর’ (মায়েদাহ ৬)

ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, صَعِيْدًا বলতে সেই মাটিকে বুঝানো হয়েছে যেই মাটিতে শষ্য উৎপাদন করা হয়। আর طَيِّبًا বলতে পবিত্র মাটিকে বুঝানো হয়েছে।[10]

অতএব পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করতে হবে। কিন্তু যদি মাটি পাওয়া না যায়। তাহ’লে বালি অথবা পাথর দ্বারাও তায়াম্মুম করা বৈধ। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَاتَّقُوْا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ ‘সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ১৬)। আওযাঈ (রহঃ) বলেন, বালি মাটির অন্তর্ভুক্ত।[11]

তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ সমূহ :

(ক) ওযূ ভঙ্গের কারণ সংঘটিত হওয়া। অর্থাৎ তায়াম্মুম করার পরে পেশাব, পায়খানা ও বায়ু নিঃসরণ হ’লে, স্ত্রী সহবাস করলে বা স্বপ্নদোষ হ’লে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে।

(খ) পানি উপস্থিত হওয়া। অর্থাৎ তায়াম্মুম করার পরে পানি পাওয়া গেলে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং তার উপর উক্ত পানি দ্বারা ওযূ করা ওয়াজিব হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, الصَّعِيْدُ الطَّيِّبُ وَضُوْءُ الْمُسْلِمِ وَلَوْ إِلَى عَشْرِ سِنِيْنَ فَإِذَا وَجَدْتَ الْمَاءَ فَأَمِسَّهُ جِلْدَكَ فَإِنَّ ذَلِكَ خَيْرٌ. ‘পবিত্র মাটি মুসলমানের জন্য পবিত্রকারী, যদিও সে দশ বছর পানি না পায়। আর যখন পানি তুমি পাবে তখন যেন তোমার চর্মে পানি লাগাবে, কেননা এটাই উত্তম’।[12]

ছালাত আরম্ভ হওয়ার পরে পানি পাওয়া গেলে করণীয় :

পানি না পাওয়ার কারণে তায়াম্মুম করে ছালাত আরম্ভ করলে এবং ছালাত রত অবস্থায় পানি উপস্থিত হ’লে উক্ত ছালাত ছেড়ে পুনরায় ওযূ করে ছালাত আদায় করতে হবে কি-না? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। তবে এক্ষেত্রে ছহীহ মত হ’ল, তাকে পুনরায় ওযূ করে ছালাত আদায় করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَلَمْ تَجِدُوْا مَاءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا ‘অতঃপর যদি পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর (মায়েদাহ ৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন পানি পাবে তখন তোমার চর্মে পানি লাগাবে, এটাই উত্তম’।[13]

অতএব পানি পাওয়ার সাথে সাথে তায়াম্মুম বাতিল হয়ে যাবে। পানি দ্বারা ওযূ করে ছালাত আদায় করতে হবে।

তায়াম্মুম করে ছালাত আদায়ের পরে পানি পেলে করণীয় :

পানি না পাওয়ার কারণে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করার পরে পানি পাওয়া গেলে ছালাত বাতিল হবে না। অর্থাৎ পুনরায় ওযূ করে ছালাত আদায় করতে হবে না। কেননা পানি না পাওয়ার কারণে ওযূর পরিবর্তে তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে ছালাত আদায় করা হয়েছে। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ خَرَجَ رَجُلاَنِ فِيْ سَفَرٍ فَحَضَرَتِ الصَّلاَةُ وَلَيْسَ مَعَهُمَا مَاءٌ فَتَيَمَّمَا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَصَلَّيَا ثُمَّ وَجَدَا الْمَاءَ فِى الْوَقْتِ فَأَعَادَ أَحَدُهُمَا الصَّلاَةَ وَالْوُضُوْءَ وَلَمْ يُعِدِ الآخَرُ، ثُمَّ أَتَيَا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرَا ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ لِلَّذِيْ لَمْ يُعِدْ أَصَبْتَ السُّنَّةَ وَأَجْزَأَتْكَ صَلاَتُكَ. وَقَالَ لِلَّذِيْ تَوَضَّأَ وَأَعَادَ لَكَ الأَجْرُ مَرَّتَيْنِ.

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা দুই ব্যক্তি সফরে বের হয়। পথিমধ্যে ছালাতের সময় উপনীত হ’ল তারা পানি না পাওয়ায় তায়াম্মুম করে ছালাত আদয় করল। অতঃপর উক্ত ছালাতের সময়ের মধ্যে পানি প্রাপ্ত হওয়ায় তাদের একজন ওযূ করে পুনরায় ছালাত আদায় করল এবং অপর ব্যক্তি ছালাত আদায় হ’তে বিরত থাকল। অতঃপর উভয়েই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে এই ঘটনা বর্ণনা করল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘তোমাদের যে ব্যক্তি পুনরায় ওযূ করে ছালাত আদায় করেনি সে সুন্নাত অনুযায়ী কাজ করেছে এবং এটাই তার জন্য যথেষ্ট’। আর যে ব্যক্তি ওযূ করে পুনরায় ছালাত আদায় করেছে তার সম্পর্কে বলেন, ‘তুমি দ্বিগুণ ছওয়াবের অধিকারী হয়েছ’।[14]

অতএব সুন্নাত হ’ল, পুনরায় ছালাত আদায় না করা। পক্ষান্তরে পুনরায় ওযূ করে ছালাত আদায়কারী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দ্বিগুণ ছওয়াবের অধিকারী বলার কারণ হ’ল সে ব্যক্তি জানত না যে, কোনটি সুন্নাত। তাই সে ইজতিহাদ বা  গবেষণা করে ছালাত বাতিল হওয়ার ভয়ে পুনরায় ওযূ করে ছালাত আদায় করেছিল। সুতরাং সে ইজতিহাদ ও ছালাত উভয়টির জন্য দ্বিগুণ ছওয়াবের অধিকারী হয়েছিল। কিন্তু উল্লিখিত হাদীছ হ’তে কোনটি সুন্নাত এটা জানার পরেও যদি কোন ব্যক্তি পুনরায় ওযূ করে ছালাত আদায় করে তাহ’লে তা বিদ‘আতে পরিণত হবে। কেননা তা সু্ন্নাত বহির্ভূত আমল।[15]

(গ) ওযর দূরীভূত হওয়া। অর্থাৎ যে ওযরের কারণে তায়াম্মুম করা হয়েছে সে ওযর দূরীভূত হ’লে তায়াম্মুম বাতিল হয়ে যাবে। যেমন- অসুস্থতা বৃদ্ধির আশংকায় তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করা বৈধ। কিন্তু তায়াম্মুম অবস্থায় সুস্থতা ফিরে পেলে তায়াম্মুম বাতিল হয়ে যাবে এবং তার উপর ওযূ করে ছালাত আদায় করা ওয়াজিব হবে।

তায়াম্মুম করার নিয়ম

তায়াম্মুমের নিয়ত করে, বিসমিল্লাহ বলে উভয় হাত মাটিতে মারবে। অতঃপর তাতে ফুঁ দিয়ে মুখমন্ডল ও উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত উপরিভাগ মাসাহ করবে। হাদীছে এসেছে,

عَنْ سَعِيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فَقَالَ إِنِّيْ أَجْنَبْتُ فَلَمْ أُصِبِ الْمَاءَ فَقَالَ عَمَّارُ بْنُ يَاسِرٍ لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ أَمَا تَذْكُرُ أَنَّا كُنَّا فِيْ سَفَرٍ أَنَا وَأَنْتَ فَأَمَّا أَنْتَ فَلَمْ تُصَلِّ، وَأَمَّا أَنَا فَتَمَعَّكْتُ فَصَلَّيْتُ فَذَكَرْتُ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيْكَ هَكَذَا فَضَرَبَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِكَفَّيْهِ الأَرْضَ وَنَفَخَ فِيْهِمَا ثُمَّ مَسَحَ بِهِمَا وَجْهَهُ وَكَفَّيْهِ-

সাঈদ ইবনু আব্দুর রহমান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর নিকট এসে বলল, আমি নাপাক হয়েছি, কিন্তু পানি পেলাম না। এসময় আম্মার ইবনু ইয়াসার ওমর (রাঃ)-কে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, আপনার কি স্মরণ নেই যে, এক সফরে আমি ও আপনি উভয়ে ছিলাম। উভয়ে নাপাক হয়েছিলাম, কিন্তু আপনি পানির অভাবে ছালাত আদায় করলেন না, আর আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম এবং ছালাত আদায় করলাম। অতঃপর এক সময় আমি এটা নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট বিবৃত করলাম। তিনি বললেন, তোমার জন্য এরূপ করাই যথেষ্ট ছিল। এই বলে তিনি স্বীয় হাতের করদ্বয় যমীনের উপর মারলেন এবং উভয় হাতে ফুঁ দিলেন। অতঃপর উভয় হাত দ্বারা মুখমন্ডল ও দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করলেন।[16]

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيْكَ أَنْ تَقُوْلَ بِيَدَيْكَ هَكَذَا، ثُمَّ ضَرَبَ بِيَدَيْهِ الأَرْضَ ضَرْبَةً وَاحِدَةً ثُمَّ مَسَحَ الشِّمَالَ عَلَى الْيَمِيْنِ وَظَاهِرَ كَفَّيْهِ وَوَجْهَهُ.

‘তোমার পক্ষে এরূপ করাই যথেষ্ট ছিল। এই বলে তিনি তাঁর উভয় হাত একবার মাটিতে মারলেন এবং বাম হাত দ্বারা ডান হাত মাসাহ করলেন। অতঃপর মুখমন্ডল ও উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত তার উপরিভাগ মাসাহ করলেন’

- See more at: http://i-onlinemedia.net/archives/3179#sthash.v9mLJOM4.dpuf