মহান আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন

الذين يقيمون الصلوة ومما رزقنهم ينفقون- اولئك هم المومنون حقا- لهم درجت عند ربهم ومغفرة ورزق كريم-

‘‘যারা নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে ব্যয় করে। তারা হল সত্যিকার ঈমানদার। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মান জনক রিযিক। [ সূরা আনফাল-৩-৪]

Pages

শবে বারাত

প্রশ্ন : শবে বারাতের জন্য বিশেষ পদ্ধতির নামায বলতে কিছু ইসলামে আছে কি?
খুরশিদ আলম, উত্তরা, ঢাকা।
উত্তর :  এ রাতের কিছু ভিত্তিহীন কাজকর্ম : ইসলামে এ রাতের নামাযের বিশেষ কোন নিয়ম-নীতি নির্ধারিত নেই। যেমন- আমাদের সমাজে কেউ কেউ শবে বারাআতের জন্যে আলাদা পদ্ধতির নামায আছে বলে মনে করেন। তারা মাকসূদুল মুমিনীন নামক কিতাবের বরাত দিয়ে বলেন, এই নামাযের নিয়ম-নীতি ভিন্ন। যেমন- প্রথম রাকা’আতে অমুক সুরাহ পড়তে হবে, দ্বিতীয় রাক’আতে পড়তে হবে অমুক সূরাহ। এ জাতীয় কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মনে রাখতে হবে, মাকসুদুল মুমিনীন -এর ওই বিশেষ পদ্ধতির নামায ও এর বর্ণিত রিওয়াতগুলো সবই অমুলক ও মউযূ। উক্ত কিতাবে কতগুলো একেবারে ভিত্তিহীন ও জাল রিওয়াত লিখে কোনটাতে মিশকাত, কোনোটাতে তিরমিযী, আবার কোনোটাতে বুখারী ইত্যাদির নাম লিখে দেয়া হয়েছে। অথচ এসব কিতাবে ওসব রিওয়ায়াতের নাম-নিশানা পর্যন্ত নেই এবং এগুলো ভিত্তিহীন ও বাতিল।
এসব পরিহার করে এই রাতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সাধারণ নফল নামাযের মতো নফল নামায পড়া উচিত। হাদিস দ্বারা শুধু এতটুকুই প্রমাণিত হয় যে, এ রাতের নফল হবে লম্বা, সিজদা হবে দীর্ঘ দীর্ঘ। দু’রাক’আত করে তবে মোট কত রাকাআত তা সংখ্যায় নির্দিষ্ট নেই। কোন নির্দিষ্ট সূরার সীমাবদ্ধতাও নেই। [মারাকিল ফালাহ : ২১৯]
উল্লেখ্য এই রাতে খিচুড়ি বণ্টন, হালুয়া রুটির প্রথা, মসজিদে আলোকসজ্জা করা ইত্যাদি নাজায়িয ও বিদ’আত কাজ। এগুলো শয়তানের ধোঁকা। মানুষকে আসল কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য শয়তান এসব অযথা কাজকর্মে মানুষকে লাগিয়ে দেয়। এসব থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে

কিছু প্রয়োজনীয় মসলা

প্রশ্ন : আযানের সময় হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নাম মুবারক শুনার পর আংগুল চুম্বন করা এবং আংগুল দিয়ে চোখ মলা কি জরুরী?
আমাদের এলাকায় কোন কোন মানুষ এরূপ করে থাকে এবং কেউ না করলে তাকে ওহাবী ইত্যাদি বলে গালী দেয়। এ সম্পর্কে শরীয়তের হুকুম কি?
কবির আহমদ, কুমিল্লা।
উত্তর : আযানের সময় হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নাম শুনে আংগুল চুম্বন করা এবং চোখে লাগানো কোন মারফূ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। এ কাজকে সুন্নাত মনে করা ভুল। অবশ্য অতীতের কোন কোন আলেম চোখের ব্যথা দূর করার জন্য এবং পাওয়ার বৃদ্ধির জন্য চিকিৎসা স্বরূপ এরূপ করেছেন। এখনো যদি কেউ সুন্নাত বা মুস্তাহাবের গুরুত্ব না দিয়ে চোখের উপকারের জন্য চিকিৎসা স্বরূপ এরূপ করে তাহলে করতে পারে। কিন্তু শর্ত হল যে, কেউ যদি না করে তাহলে তাকে খারাপ মনে করতে পারবে না এবং ওহাবী ইত্যাদি বলতে পারবে না। যদি খারাপ মনে করে বা ওহাবী ইত্যাদি বলে, তাহলে তা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয হয়ে যাবে। কেননা, মুস্তাহাব নিয়ে বাড়াবাড়ি করা নাজায়িয। আর এই আমল তো মুস্তাহাবও নয়। বরং এক ধরনের চিকিৎসা মাত্র। সুতরাং এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা চরম মূর্খতা। [প্রমাণ : ফাতাওয়া রাহীমিয়া : ১/৫৮, ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ১/১৮৬]
প্রশ্ন : কোন  লোক ইন্তিকাল করলে চতুর্থ দিনে টাকার বিনিময়ে কুরআন খতম, মিলাদ পড়ানো এবং চল্লিশ দিন পরে (চেহলাম উপলক্ষ্যে) আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে মহা ধুমধামের সাথে খাওয়া-দাওয়া শরীয়তের ভিত্তিতে হুকুম কি? এতে কি মৃত ব্যক্তির উপকার হয়?
মাসুদ, কুমিল্লা।
উত্তর : কোন মানুষ ইন্তেকাল করার পর যে কোন দিনে তাঁর সাওয়াব রিসানীর উদ্দেশ্যে কুরআন শরীফ পড়ে টাকা নেয়া বা বিনিময় গ্রহণ করা নাজায়িয। আর সেক্ষেত্রে যেহেতু কুরআন তিলাওয়াতকারীই উক্ত তিলাওয়াত করার দ্বারা কোন সাওয়াব পায় না, সুতরাং মুর্দা ব্যক্তির রূহে তিনি কি পৌঁছাবেন? মুর্দার রূহে সাওয়াব পৌঁছাতে হলে, প্রথমতঃ তিলাওয়াতকারীর সাওয়াব পেতে হবে। তারপর তিনি সেই সাওয়াবটা অন্যের রূহে বখশিয়ে দিবেন। কিন্তু তিনি বিনিময় গ্রহণ করার কারণে (যা শরীয়তে হারাম) যখন নিজেই সাওয়াব থেকে মাহরূম হচ্ছেন, তখন অন্যের জন্য সাওয়াব রিসানীর তো পশ্নই উঠে না। কাজেই এ ধরনের তিলাওয়াত দ্বারা মৃত ব্যক্তির উপকার হবে বলে কোন আশা করা যায় না। [প্রমাণ : ফাতাওয়া শামী : ৫/৩৯]
দিন-তারিখ জরুরী মনে না করে এবং বিনিময় গ্রহণ ছাড়া শুধুমাত্র সাওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে কেউ কুরআন শরীফ পড়ে কোন মুর্দারের জন্য সাওয়াব রিসানী করলে তাতে অবশ্য মুর্দারের উপকার হয়। তবে মায়্যিতের আত্মীয়-স্বজন নিজেরাই কুরআন শরীফ পড়ে বখশিয়ে দিবে এটাই উত্তম। এমনকি দিন-তারিখ জরুরী মনে না করে যে কোন একদিন স্বেচ্ছায় বালিগ ওয়ারিশগণ তাদের স্ব স্ব মাল থেকে গরীব-মিসকিন ও গরীব আত্মীয়-স্বজনদেরকে খাওয়ালে তাতেও মুর্দারের উপকার হয়। বরং মায়্যিতের মাগফিরাতের জন্য মাঝে মাঝে গরীবদের এ ধরনের খাওয়ানো বা দান করা ভাল। তবে দিন-তারিখ ঠিক করে যেমন তিন দিনা, সাত দিনা, ত্রিশা ও চল্লিশা ইত্যাদি প্রথা পালন করে গরীব-মিসকিনদরকে খাওয়ানো না-জায়িয ও বিদ’আত। কারণ, শরীয়ত কর্তৃক যা নির্ধারিত নেই তা নির্ধারণ করার অধিকার কারো নেই। সুতরাং তা থেকে বিরত থাকা জরুরী। ইসালে সাওয়াবের নামে ধুমধামের সহিত ধনীদেরকে যিয়াফত খাওয়ানো বাঞ্ছনীয় নয়। [প্রমাণ : খাইরুল ফাতাওয়া : ১০৮-২৪৪, ইমদাদুল আহকাম : ১/১১১-১১৪, ফাতাওয়া রশীদিয়া : ১৩১, ১৬০,৫১২, ফাতাওয়া রহীমিয়া ; ২/৩৩৩]

প্রশ্ন : শরীয়তের দৃষ্টিতে মৃত্যুবার্ষিকী পালন কতটুকু জায়িয? মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মৃতের আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে ফকির- মিসকিনদের খাওয়ানো কতটুকু শরীয়ত সম্মত? এ দিনে কি আমল করলে মায়্যিতের আত্মা শান্তি পাবে? অনুগ্রহ করে জানাবেন।
মোঃ বিল্লাল হোসেন, সুনামগঞ্জ, সিলেট।
উত্তর : শরীয়তে মৃত্যুবার্ষিকী পালনের কোন ভিত্তি নেই। সল্ফে সালেহীন তথা সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনদের যুগে এর প্রচলন ছিল না। সুতরাং মৃত্যুবার্ষিকীর রীতি পালন নিছক মনগড়া ও বিজাতীয় একটি কুসংস্কার। তাই মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মিসকিন খাওয়ানো বা অন্য যে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা ঠিক নয়। বরং শরীয়ত পরিপন্থী কাজ।
উল্লেখ থাকে যে, মৃতের রূহের মাগফিরাতের জন্য দিন-তারিখ নির্দিষ্ট না রেখে বৎসরের যে কোন সময় অবস্থা, সুযোগ ও সামর্থ অনুযায়ী দান, সদকা ও নফল ইবাদত ইত্যাদির মাধ্যমে সাওয়াব রেসানী করা যায়। হাদীস শরীফের বর্ণনানুযায়ী মৃত ব্যক্তি সব সময়ই অপেক্ষায় থাকে তার কোন সন্তান বা আত্মীয় তার জন্যে কোন সাওয়াব পাঠায় কি-না? তাই যখনই সুযোগ হয় তখনই যথা সম্ভব যে কোন আমলের মাধ্যমে ইসালে সাওয়াব করা উচিত। [প্রমাণ :  ইমদাদুল মুফতীন : ১/১৫৮, মাজমু’আতুল ফাতাওয়া : ১/৩৪১, ইমদাদুল আহকাম : ১/১৯০, ফাতাওয়া রশীয়িা : ১৬৬, শামী : ২/২৪০-৪১]
জিজ্ঞাসা : টাই পরা কখন থেকে শুরু হয়, শরীয়াতে টাই ব্যবহার করার হুকুম কি? জসিম, খুলনা।
জবাব : টাই বর্তমানে বিধর্মীদের শি’আর বা জাতীয় নিদর্শন। অবশ্য শুরুতে টাই খৃষ্টানদের ধর্মীয় শি’আর ছিল। কেননা, তারা বিশ্বাস করে যে, হযরত ঈসা আ. আল্লাহর পুত্র। বিশ্বের সকল মানুষের পাপ মুক্তির জন্য তিনি ক্রসবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। (তাদের এ আকিদা সম্পূর্ণ কুরআন-হাদিস বিরোধী ও কুফরি) তাই এই আকিদার ধারক-বাহক হিসেবে ক্রস সদৃশ্য টাই খৃষ্টানরা গলায় ধারণ করে এবং লেবাসের মধ্যে টাইকে শামিল করে। পরবর্তীতে অবশ্যই টাই এর সাথে এ বিশ্বাস পূর্বের ন্যায় সম্পৃক্ত থাকেনি; বর্তমানে তা বিধর্মীদের জতীয় শি’আর তথা বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। আর মুসলমানদের জন্য অমুসলিমদের জাতীয় শি’আর ব্যবহার করা নাজায়িয কাজ। কেউ করে থাকলে, তা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ পূর্বক খালেস তাওবা করা উচিত। [আল-বিদায়া ওয়াননিহায়া, ২ঃ৯৪ # খাইরুল ফাতাওয়া ১ঃ১৫১ # আবূ দাউদ শরিফ ২ঃ৫৫৯ # মিশকাত শরিফ ২ঃ৩৭৫ #কিফায়াতুল মুফতী ৯ঃ১৫৩]
টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলানো প্রসঙ্গ
মাওলানা আব্দুল কবীর, ফেনী।
১২৯. প্রশ্ন : আমরা জানি টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলানো কবিরাহ গোনাহ। কিন্তু কিছুদিন আগে এ বিষয়টি নিয়ে একজনের সাথে আমার তর্ক হয়। তার দাবী হলো সর্বাবস্থায় তা হারাম নয়। অহংকারের নিয়তে করলেই কেবল তা হারাম হবে। অন্যথায় হারাম হবে না। এ বিষয়ে দলীলসহ বিস্তারিত জানতে চাই। শরিফ আহমাদ, মাদারীপুর।
জবাব : টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলানো হারাম। চাই অহংকারের নিয়ত থাকুক বা না থাকুক। যারা মনে করেন, অহংকারের নিয়ত না থাকলে, সাধারণ রেওয়াজ বা অভ্যাসের কারণে করলে তা হারাম হবে না- তাদের এ ধারণা সঠিক নয়। অহংকার বশত না হলেও এটা নাজায়েজ। অহংকারবশত করা তো আরো মারাত্মক গোনাহ। কোনো কোনো হাদীসে অহংকারবশত কথাটা আছে। কিন্তু কিছু হাদীস এমনও আছে যেগুলোর বক্তব্য হচ্ছে, বিনা অহংকারে হলেও তা গোনাহের কাজ এবং নিষিদ্ধ। যেমন- হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন- আমরা রাসুলুল্লাহ সা. -এর সাথে বসা ছিলাম। ইতোমধ্যে হযরত আমরা ইবনে যুরারাহ রা. এসে আমাদের সাথে মিলিত হলেন। তাঁর গায়ে ছিল এক জোড়া কাপড়-লুঙ্গি ও চাদর। লুঙ্গি টাখনুর নিচে ঝুলানো ছিল। তা দেখে নবীজি সা. নিজের কাপড়ের একাংশ ধরে বিনয় ও তাওয়াযুর সাথে বলতে লাগলেন, ‘ইয়া আল্লাহ! (আমি) তোমার দাস এবং তোমার দাস ও দাসির পুত্র! একথা শুনে আমর রা. ফিরে তাকালেন এবং রাসুলুল্লাহ সা. -কে দেখে আরজ করলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আমার পায়ের গোছা খুব চিকন।’ রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, হে আমর ইবনে যুরারাহ! আল্লাহপাক সব বস্তুকেই সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। (সুতরাং তোমার পায়ের গোছাকে অসুন্দর বলো না।) হে আমর ইবনে যুরারাহ! টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান কারীকে আল্লাহ ভালবাসেন না। [আলমুজামুল কবীর, হাদিস:৭৯৯০]
হাদিসটিতে একথা পরিষ্কার যে, সাহাবী আমর ইবনে যুরারাহ রা. টাখনু ঢেকে লুঙ্গি পরেছিলেন, নিজের পায়ের সরু গোছাকে লুকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে, অহংকারের কারণে নয়। তা স্বত্ত্বেও রাসুলুল্লাহ সা. তাকে এভাবে লুঙ্গি পরতে নিষেধ করেছেন। হযরত হুযাইফা রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. একদিন তার (হুযাইফার) পায়ের গোছাতে ধরলেন এবং বললেন, ‘এটি লুঙ্গির স্থান, যদি (এখানে পরতে) অস্বীকার কর, তাহলে আরেকটু নামিয়ে দাও। যদি তাও অস্বীকার কর, তাহলে শোন টাখনুতে লুঙ্গির কোন হক নেই। (অবশ্যই টাখনুর উপরে থাকতে হবে।) [তিরমিযি শরিফ : ১/৩০৮, হাদিস : ১৭৮৩]
আল্লামা সিন্ধি রাহ. হাদীসটির ব্যাখ্যায় বলেন, এটিই (লুঙ্গি ইত্যাদি পরার) সীমানা। যদিও অহংকার না থাকে। হ্যাঁ, যদি এর সাথে অহংকার যুক্ত হয়ে যায়, তাহলে বিষয়টি আরো কঠিন হয়ে যায়। বিনা অহংকারে কিছুটা হালকা থাকে। [হাশিয়াতুস সিন্ধি আলান নাসাঈ : ৮/২০৭]
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন- “মুমিনের লুঙ্গি থাকবে পায়ের গোছার অর্ধেক পর্যন্ত। এ স্থান থেকে টাখনুর উপর পর্যন্ত নামাতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু তা থেকেও যা নিচে যাবে, সেটা জাহান্নামে যাবে। আর যে ব্যক্তি ‘অহংকারবশত’ লুঙ্গি টেনে-টেনে চলে, আল্লাহ পাক কিয়ামতের দিন তার দিকে তাকাবেন না।” [আবুদাউদ শরিফ : ২/৫৬৬, হাদিস : ৪০৯৩]
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, হাদিসটির প্রথমাংশে বর্ণিত শাস্তির জন্য ‘অহংকারবশত কথাটা নেই। অর্থাৎ অহংকার না থাকলেও জাহান্নামে যাওয়ার হুমকি। আর অহংকার থাকলে শাস্তি কী হবে, সে প্রসঙ্গে হাদিসের শেষাংশে বলা হয়েছে।
টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলানোই অহংকারের আলামত। হাদিসে এমনটিই এসেছে।
হযরত আবু জুরাই জাবের বিন সুলাইম রা. এর সূত্রে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসে রাসুলুল্লাহ সা. বলেন- “…….. তোমরা লুঙ্গিকে পায়ের গোছার অর্ধেক পর্যন্ত উঠিয়ে নাও। যদি তা মানতে না পার, তাহলে টাখনুর উপর পর্যন্ত নামাতে পার। টাখনুর নিচে ঝুলানোর ব্যাপারে সাবধান। কেননা তা অহংকারের কারণেই হয়ে থাকে। আর আল্লাহ তাআলা অহংকার পছন্দ করেন না।
ইবনুল আরাবী রহ. বলেন, যে ব্যক্তির কাপড় টাখনু ছাড়িয়ে যায়, তার এমন দাবী গ্রহণযোগ্য নয় যে, আমি তা অহংকারবশত করি না। ….. কেননা, এভাবে কাপড় লম্বা করে ঝুলিয়ে দেওয়াই অহংকারের আলামত। [তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম : ৪/১২২]
ইসলাম প্রচারের স্বার্থে কোন কিছু ভিডিও করা নাছির উদ্দিন, চাঁদপুর।
১৩০. প্রশ্ন : ইসলাম প্রচারের স্বার্থে কোন প্রাণীর ছবি বা দৃশ্য ভিডিও করে সিনেমা ও টেলিভিশন দ্বারা ইসলামী অনুষ্ঠানের নামে নাটক/ছায়াছবি করে দেখানো জায়েয আছে কি-না?
জবাব : শরিয়ত যে সমস্ত জিনিসকে হারাম ঘোষণা করেছে, তা সর্বাবস্থায় হারাম। চাই দুনিয়ার কাজের জন্য হোক। চাই দ্বীনের কাজের জন্য হোক। দ্বীনের প্রচারের জন্য আল্লাহ তা’আলা কোন হারাম কাজের সাহায্য নিতে বলেননি। তাছাড়া হারামের সাহায্যে কোন দিন দ্বীনের প্রচার হতে পারেনা। বরং দ্বীনের দাফন হতে পারে।
সুতরাং ইসলাম প্রচারের স্বার্থে হলেও কোন প্রাণীর ছবি বা দৃশ্য ভিডিও করা বা তা সিনেমা-টেলিভিশনে দেখানো নাজায়িয। [ইমদাদুল মুফতিন ৯৯১ # রদ্দুল মুহতার ৬ঃ৩৪৯]