সুরা বাকারার তাফসির
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সূরা বাকারাহ'র ১০৩ নম্বর আয়াতে বলেছেন-
وَلَوْ أَنَّهُمْ آَمَنُوا وَاتَّقَوْا لَمَثُوبَةٌ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ خَيْرٌ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ (103
وَلَوْ أَنَّهُمْ آَمَنُوا وَاتَّقَوْا لَمَثُوبَةٌ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ خَيْرٌ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ (103
"যদি তারা ঈমান আনত এবং খোদাভীরু হতো, তবে আল্লাহর কাছ থেকে উত্তম প্রতিদান পেত। যদি তারা জানত।" (২:১০৩)
এর আগের পর্বে আমরা বলেছিলাম ইহুদীরা তাওরাত ও অন্যান্য ঐশি গ্রন্থ অনুসরণের পরিবর্তে যাদুবিদ্যা সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান করত। তারা এ ব্যাপারে যুক্তি দেখিয়ে বলত, হযরত সোলায়মান (আ.) যাদুর উৎস। কিন্তু পবিত্র কোরআন হযরত সোলায়মান (আ.) সম্পর্কে ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছে৷ এই আয়াতে বলা হয়েছে, ইহুদীরা যদি প্রকৃত বিশ্বাসী হতো ও এ ধরনের ভুল ধারণা থেকে মুক্ত থাকত তাহলে তাদের জন্যই কল্যাণকর হতো৷ কারণ শুধু ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা যথেষ্ট নয়; খোদাভীরুতা ও আত্মসচেতনতাও জরুরী৷ খোদাভীরুতা বা তাকওয়ার অর্থ শুধু মন্দ বা খারাপ কাজ থেকেই দূরে থাকা নয়, এটা হল এমন এক অভ্যন্তরীণ শক্তি যা মানুষকে নোংরা তৎপরতা যেমন, মিথ্যা বলার মত মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখার পাশাপাশি তাদেরকে ভালো কাজ করতেও উৎসাহিত করে৷ ভালো কাজ বলতে নামাজ পড়া, অন্যায়-অবিচার প্রতিরোধ প্রভৃতি ভালো কাজকে বোঝানো হয়েছে৷
এর আগের পর্বে আমরা বলেছিলাম ইহুদীরা তাওরাত ও অন্যান্য ঐশি গ্রন্থ অনুসরণের পরিবর্তে যাদুবিদ্যা সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান করত। তারা এ ব্যাপারে যুক্তি দেখিয়ে বলত, হযরত সোলায়মান (আ.) যাদুর উৎস। কিন্তু পবিত্র কোরআন হযরত সোলায়মান (আ.) সম্পর্কে ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছে৷ এই আয়াতে বলা হয়েছে, ইহুদীরা যদি প্রকৃত বিশ্বাসী হতো ও এ ধরনের ভুল ধারণা থেকে মুক্ত থাকত তাহলে তাদের জন্যই কল্যাণকর হতো৷ কারণ শুধু ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা যথেষ্ট নয়; খোদাভীরুতা ও আত্মসচেতনতাও জরুরী৷ খোদাভীরুতা বা তাকওয়ার অর্থ শুধু মন্দ বা খারাপ কাজ থেকেই দূরে থাকা নয়, এটা হল এমন এক অভ্যন্তরীণ শক্তি যা মানুষকে নোংরা তৎপরতা যেমন, মিথ্যা বলার মত মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখার পাশাপাশি তাদেরকে ভালো কাজ করতেও উৎসাহিত করে৷ ভালো কাজ বলতে নামাজ পড়া, অন্যায়-অবিচার প্রতিরোধ প্রভৃতি ভালো কাজকে বোঝানো হয়েছে৷
এরপর ১০৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَقُولُوا رَاعِنَا وَقُولُوا انْظُرْنَا وَاسْمَعُوا وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ (104)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَقُولُوا رَاعِنَا وَقُولُوا انْظُرْنَا وَاسْمَعُوا وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ (104)
"হে বিশ্বাসীগণ রাসূল (সাঃ)-এর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য 'রায়েনা' শব্দটি বল না, বরং 'উনজুরনা'বল এবং শুনে রাখ অবিশ্বাসীদের জন্য ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে৷" (২:১০৪)
ইসলামের প্রাথমিক যুগে রাসূল (সাঃ) যখন বক্তৃতা দিতেন বা কোরআনের আয়াত পড়ে শোনাতেন তখন মুসলমানরা রাসূল (সাঃ)এর বক্তব্যকে ভালোভাবে উপলদ্ধির জন্য রাসূলের কাছে আবেদন করতেন-যাতে রাসূল(সাঃ) তাদের অবস্থা দেখে বক্তব্য রাখেন৷ তারা তাদের এই আবেদন জানাতেন 'রায়েনা' নামক শব্দটি ব্যবহার করে৷ আরবীতে রায়েনা শব্দের অর্থ 'অন্যকে রক্ষা করা বা দেখা-শোনা করা'৷ কিন্তু হিব্রু ভাষায় এই শব্দের অর্থ হলো 'বোকা'৷ ইহুদীরা মুসলমানদের পরিহাস করে বলতো তোমরা নিজেদেরকে বোকা বা আহাম্মক করার জন্য তোমাদের নবীর কাছে আবেদন জানাচ্ছো। আর এ জন্যে কোরআনের আয়াতে এ নির্দেশ দেয়া হয় যে, রায়েনার পরিবর্তে মুসলমানরা যেন উনযুরনা বলে-যাতে শত্রুরা অপব্যাখ্যার সুযোগ না পায় ৷ 'উনযুরনা' শব্দের অর্থ হলো 'আমাদের দিকে লক্ষ্য করুন'৷ এ শব্দটি ব্যবহার করলে শত্রুরা মুসলমান ও তাদের নবীকে উপহাস করার সুযোগ পাবে না৷ এ আয়াতের মূল বক্তব্য হল শত্রুরা ব্যঙ্গ বা উপহাস করতে পারে এমন কাজ থেকে বিরত থাকা। এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইসলাম বড়দের সাথে ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলার সময় উপযুক্ত শব্দ ব্যবহার এবং সম্মান প্রদর্শন ও আদব-কায়দা রক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়৷ একইসঙ্গে যেসব কাজ ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি উপহাস বা অবমাননার সুযোগ করে দেয় এবং শত্রুদেরকে অপব্যাখ্যার সুযোগ দেয়, সেসব কাজ থেকে মুসলমানদেরকে বিরত থাকতে হবে৷
১০৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন-
مَا يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَلَا الْمُشْرِكِينَ أَنْ يُنَزَّلَ عَلَيْكُمْ مِنْ خَيْرٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَاللَّهُ يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ (105
مَا يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَلَا الْمُشْرِكِينَ أَنْ يُنَزَّلَ عَلَيْكُمْ مِنْ خَيْرٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَاللَّهُ يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ (105
"আহলে-কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কাফের,তাদের মনঃপুত নয় যে, তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি কোন কল্যাণ অবতীর্ণ হোক। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিশেষ ভাবে স্বীয় অনুগ্রহ দান করেন। আল্লাহ মহান অনুগ্রহদাতা।" (২:১০৫)
এই আয়াতে ঈমানদারদের প্রতি কাফের ও মুশরিকদের চরম শত্রুতা ও বিদ্বেষের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। কাফের মুশরেকরা মুসলমানদেরকে ভীষণ হিংসা করত। মুসলমানরা যে স্বতন্ত্র ঐশিগ্রন্থ এবং স্বতন্ত্র নবীর অনুসারী এটা ইহুদী-খ্রিস্টানরা মেনে নিতে চাইত না। আল্লাহ পাক এ আয়াতে বলেছেন, তিনি যার জন্য ভালো মনে করেন তাকেই অনুগ্রহ প্রদান করেন এবং যাদের জন্য দরকার মনে করেন, তাদের কাছেই নবী পাঠান৷ আর এ ক্ষেত্রে তিনি কারো এমন কোন ইচ্ছের পরোয়া করেন না ।
এরপর সূরা বাকারাহ'র ১০৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
مَا نَنْسَخْ مِنْ آَيَةٍ أَوْ نُنْسِهَا نَأْتِ بِخَيْرٍ مِنْهَا أَوْ مِثْلِهَا أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (106)
مَا نَنْسَخْ مِنْ آَيَةٍ أَوْ نُنْسِهَا نَأْتِ بِخَيْرٍ مِنْهَا أَوْ مِثْلِهَا أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (106)
"আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর ওপর শক্তিমান?" (২:১০৬)
প্রথম দিকে মুসলমানদের কেবলা ছিল বায়তুল মোকাদ্দাস৷ ইহুদীরা এটাকে যুক্তি দেখিয়ে বলত: মুসলমানদের তো আলাদা কোন ধর্মই নেই। আর এ জন্যেই তারা আমাদের কেবলার মুখোমুখী হয়ে প্রার্থনা করে। এ কারণেই আল্লাহ মুসলমানদেরকে বায়তুল মোকাদ্দাস থেকে কেবলা মক্কায় স্থানান্তরের নির্দেশ দেন৷ কিন্তু এবার ইহুদীরা অন্য আপত্তি উত্থাপন করে বলে যে, যদি প্রথম কেবলা ঠিক ছিল-তাহলে কেন কেবলা পরিবর্তন করা হল? আর যদি দ্বিতীয় কেবলা সঠিক হয় তাহলে তোমাদের পূর্ববর্তী সব আমল নষ্ট হয়ে গেছে৷
আল্লাহ পাক এইসব বিতর্কের জবাবে বলেছেন, আমি কোন বিধান বা হুকুমকে রহিত করি না বা কোন বিধানকে বিলম্বিতও করি না-যতক্ষণ না ওই রকম কোন বিধান বা তার চেয়ে ভালো কোন বিধান তার স্থলাভিষিক্ত করি। কেবলা পরিবর্তন ও কাবাকে মুসলমানদের কেবলা হিসাবে ঘোষণা দেয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব করার অনেক যুক্তি ও উদ্দেশ্য রয়েছে। আর এসব বিষয় সম্পর্কে তোমরা অবগত নও৷ ইসলামী বিধান কল্যাণময় ও প্রজ্ঞাময় ৷ আর তাই স্থান, কাল ও পরিবেশ ভেদে বিভিন্ন বিষয়ের কল্যাণকর দিক পরিবর্তিত হয় বলে পূর্ববর্তী নির্দেশ বা বিধান পরিবর্তন করে তার স্থলে নতুন বিধান দেয়া হয়৷ অবশ্য খোদায়ী বিধানের মূলনীতি স্থির ও অপরিবর্তনযোগ্য৷ এই আয়াত এটাও নির্দেশ করে যে, ইসলামে কোন অচলবস্থার বা স্থবিরতার অবকাশ নেই৷ ইসলাম বিশ্বজনীন ও স্থায়ী ধর্ম বলে ইসলামের স্বার্থে এতে স্থায়ী বিধানের পাশাপাশি পরিবর্তনশীল বা অস্থায়ী বিধানও থাকতে পারে৷
আল্লাহ পাক এইসব বিতর্কের জবাবে বলেছেন, আমি কোন বিধান বা হুকুমকে রহিত করি না বা কোন বিধানকে বিলম্বিতও করি না-যতক্ষণ না ওই রকম কোন বিধান বা তার চেয়ে ভালো কোন বিধান তার স্থলাভিষিক্ত করি। কেবলা পরিবর্তন ও কাবাকে মুসলমানদের কেবলা হিসাবে ঘোষণা দেয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব করার অনেক যুক্তি ও উদ্দেশ্য রয়েছে। আর এসব বিষয় সম্পর্কে তোমরা অবগত নও৷ ইসলামী বিধান কল্যাণময় ও প্রজ্ঞাময় ৷ আর তাই স্থান, কাল ও পরিবেশ ভেদে বিভিন্ন বিষয়ের কল্যাণকর দিক পরিবর্তিত হয় বলে পূর্ববর্তী নির্দেশ বা বিধান পরিবর্তন করে তার স্থলে নতুন বিধান দেয়া হয়৷ অবশ্য খোদায়ী বিধানের মূলনীতি স্থির ও অপরিবর্তনযোগ্য৷ এই আয়াত এটাও নির্দেশ করে যে, ইসলামে কোন অচলবস্থার বা স্থবিরতার অবকাশ নেই৷ ইসলাম বিশ্বজনীন ও স্থায়ী ধর্ম বলে ইসলামের স্বার্থে এতে স্থায়ী বিধানের পাশাপাশি পরিবর্তনশীল বা অস্থায়ী বিধানও থাকতে পারে৷