মহান আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন

الذين يقيمون الصلوة ومما رزقنهم ينفقون- اولئك هم المومنون حقا- لهم درجت عند ربهم ومغفرة ورزق كريم-

‘‘যারা নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে ব্যয় করে। তারা হল সত্যিকার ঈমানদার। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মান জনক রিযিক। [ সূরা আনফাল-৩-৪]

Pages

ইসলামে নারীর মর্যাদা

নারীর এমন সাধারণ অধিকার রয়েছে, যা তার নিজেরও জানা উচিত এবং সকলের এই মৌলিক অধিকার গুলো স্বীকৃতি দেয়া উচিত। ফলে যখনই চাইবে তা পুরাপুরি উপভোগ করতে পারবে। আর এই অধিকারের সার কথা হলোঃ
১)) মালিক হওয়ার অধিকার। নারী ঘর-বাড়ী, চাষাবাদের জমি, শিল্প-কারখানা, উদ্যান, সোনা-রূপা ও বিভিন্ন প্রকারের গবাদি পশুসহ সব কিছুর মালিক হতে পারবে। চাই সে স্ত্রী হোক অথবা মা হোক অথবা কন্যা বা বোন হোক।
২)) বিয়ে করা, স্বামী নির্বাচন, খুলআ’ কামনা এবং ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার তার রয়েছে। আর এগুলো নারীর প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত অধিকার।
৩)) তার উপর ওয়াজিব তথা অত্যাবশ্যক বস্তুর শিক্ষা গ্রহণের অধিকার ও অনিস্বীকার্য বিষয়। যেমন মহান আল্লাহ্‌ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন, তাঁর ইবাদত করার পদ্ধতি শিক্ষা, নৈতিক দায়িত্ব ও করণীয় বিষয়ের জ্ঞান লাভ করা, তার সমাগ্রিক জীবনের শিষ্টাচার সম্পর্কে জানা এবং উৎকৃষ্ট চরিত্রের জ্ঞান অর্জন করা প্রভৃতি। কারণ এ ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ সকলের জন্যই। তিনি বলেনঃ
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ - سورة محمد: 19
অর্থাৎ, ((জেনে রাখ! আল্লাহ্‌ ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই।)) [সূরা মুহাম্মাদঃ ১৯] রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
طلب العلم فريضة عَلَى كُلّ مسلم - ابن ماجة: 224
অর্থাৎ, ((প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য জ্ঞান অন্বেষণ করা ফরয।)) [ইবনে মাজাঃ ২২৪]
৪)) নিজের ধন-সম্পদ ও অর্থবিত্ত থেকে স্বীয় ইচ্ছানুযায়ী সদকা করতে ও স্বামী, সন্তান-সন্ততি এবং পিতা-মাতার জন্য ব্যয় করতে পারবে, যতক্ষণ না সেটা অপচয় ও অপব্যয়ের পর্যায় পৌঁছে। এ ব্যাপারে তার অধিকার সম্পূর্ণরূপে পুরুষের অধিকারের মত।
৫)) ভালবাসা ও ঘৃণা করার অধিকার। সে সৎ ও নির্মল চরিত্রা নারীগণকে ভালবাসতে পারবে। ফলে স্বামী থাকলে তার অনুমতিক্রমে তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা, তাদেরকে উপহার দেয়া, পত্র বিনিময় করা, কুশলাদি জিজ্ঞেস করা, বিপদ ও দুর্যোগের দিনে সহানুভূতি ও সমবেদনা জ্ঞাপন করা ইত্যাদি করতে পারবে। (এটা নারীর শুধু অধিকার নয়; বরং এটা তার উচ্চ মানসিকতা ও দায়িত্ব সচেতনতার পরিচয়।) অধিকন্তু চরিত্রহীনা মহিলাদের ঘৃণা করবে এবং আল্লাহর নিমিত্তে তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবে।
৬)) জীবদ্দশায় নিজ ধন-সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের অসিয়ত করতে পারবে এবং কোন অভিযোগ আপত্তি ছাড়া তার মৃত্যুর পর তা কার্যêকর হবে। কেননা, অসিয়ত সাধারণ ব্যক্তিগত অধিকার। এ অধিকার যেমন পুরুষের রয়েছে, তেমনি নারীরও আছে। কারণ আল্লাহর সওয়াব ও প্রতিদান থেকে কেউ অমুখাপেক্ষী হতে পারে না। তবে অসিয়তকৃত অর্থ ও ধনসম্পদ এক তৃতীয়াংশের বেশী হতে পারবে না। আর এতেও পুরুষ ও নারীর অধিকার সমান।
৭)) স্বর্ণ ও রেশম যা চায় পরিধান করতে পারবে। আর এ দু’টি পুরুষদের জন্য হারাম। কিন্তু পরিধানের অধিকার স্বাধীনতার অর্থ কখনো এ নয় যে, পোষাক শূন্য হয়ে যাবে অথবা অর্ধাংশ, এক চতুর্থাংশ কাপড় পরবে কিংবা মাথা, গলা ও বক্ষদেশ উন্মুক্ত রাখবে। হাঁ, যদি এমন কোন ব্যক্তি হয় যার সামনে এগুলো করা যেতে পারে তার ব্যাপার ভিন্ন।
৮)) রূপচর্চার অধিকার অর্থাৎ, আপন স্বামীর মন সন্তুষ্টির জন্য রূপচর্চা করতে পারবে। সুরমা লাগাতে পারবে, গালে ও ওষ্ঠে লাল লিপষ্টিক ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারবে, যদি সে ইচ্ছা করে। সর্বোৎকৃষ্ট মনোহারী ও সুন্দর পোশাক এবং হার ও গহনা পরতে পারবে। বাতিল ও সন্দেহ-সংশয়ের স্থান থেকে দূরে থাকার সংকল্পে পোষাক পরিচ্ছদে অমুসলিম নারীদের অথবা বেশ্যা, পতিতা ও দেহ ব্যবসায়ী ভ্রষ্টা নারীদের ফ্যাশন অবলম্বন করবে না।
৯)) পানাহারের অধিকার। যা-ই স্বাদ লাগে ও পছন্দ হয়, তা-ই সে পানাহার করতে পারবে। পানাহারের ব্যাপারে নারী-পুরুষের কোন ভেদাভেদ নেই। যেমন হালাল বস্তু উভয়ের জন্য হলাল, তেমনি হরাম বস্তুও উভয়ের জন্য হরাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
وكُلُواْ وَاشْرَبُواْ وَلاَ تُسْرِفُواْ إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ - ورة الأعراف: 31
অর্থাৎ, ((খাও, পান কর এবং অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীকে ভালবাসেন না।)) [সূরা আল-আ‘রাফঃ ৩১] এ সম্বোধনে উভয় জাতিই অন্তর্ভুক্ত।