মহান আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন

الذين يقيمون الصلوة ومما رزقنهم ينفقون- اولئك هم المومنون حقا- لهم درجت عند ربهم ومغفرة ورزق كريم-

‘‘যারা নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে ব্যয় করে। তারা হল সত্যিকার ঈমানদার। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মান জনক রিযিক। [ সূরা আনফাল-৩-৪]

Pages

সূরায় আবু লাহাব

সূরায় আবু লাহাব
আবু লাহাব রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতকে ক্ষতিগ্রস্ত করা জন্য যথার্থই নিজের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল কিন্তু সূরাটি নাযিল হবার মাত্র সাত আট বছর পরেই বদরের যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয় যুদ্ধে কুরাইশদের অধিকাংশ বড় বড় সরদার নিহত হয় তারা সবাই ইসলাম বিরোধিতা ইসলামের প্রতি শত্রুতার ক্ষেত্রে আবু লাহাবের সহযোগী ছিল পরাজয়ের খবর মক্কায় পৌঁছার পর সে এত বেশী মর্মাহত হয় যে , এরপর সে সাত দিনের বেশী জীবিত থাকতে পারেনি তার মৃত্যুর ছিল বড়ই ভয়াবহ শিক্ষাপ্রদ তার শরীরে সাংঘাতিক ধরনের ফুসকুড়ি (Malignant pustule) দেখা দেয় রোগ সংক্রমণের ভয়ে পরিবারের লোকেরা তাকে ছেড়ে পালিয়ে যায় মরার পরও তিন দিন পর্যন্ত তার ধারে কাছে কেউ ঘেঁসেনি ফলে তার লাশে পচন ধরে চারদিকে র্দুগন্ধ ছড়াতে থাকে শেষে লোকেরা তার ছেলেদেরকে ধিক্কার দিতে থাকে একটি বর্ণনা অনুসারে তখন তারা মজুরীর বিনিময়ে তার লাশ দাফন করার জন্য কয়েকজন হাবশীকে নিয়োগ করে এবং তারা তার লাশ দাফন করে অন্য এক বর্ণনা অনুসারে , তারা গর্ত খুঁড়ে লম্বা লাঠি দিয়ে তার লাশ তার মধ্যে ফেলে দেয় এবং ওপর থেকে তার ওপর মাটি চাপা দেয় যে দীনের অগ্রগতির পথ রোধ করার জন্য সে তার সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল তার সন্তানদের সেই দীন গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে তার আরো বেশী পূর্ণ পরাজয় সম্পন্ন হয় সর্বপ্রথম তার মেয়ে দাররা হিজরাত করে মক্কা থেকে মদীনায় চলে যান এবং ইসলাম গ্রহণ করেন আর মক্কা বিজয়ের পর তার দুই ছেলে উতবা মু'আত্তাব হযরত আব্বাসের (রা) মধ্যস্থাতায় রসূলুল্লাহর (সা) সামনে হাযির হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তাঁর হাতে বাইআত করেনআবু লাহাব ছিল হাড়কৃপণ অর্থলোলুপ ইবনে আসীরর বর্ণনা মতে , জাহেলী যুগে একবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে , সে কা 'বা শরীফের কোষাগার থেকে দু'টি সোনার হরিণ চুরি করে নিয়েছে যদিও পরবর্তী পর্যায়ে সেই হরিণ দু'টি অন্য একজনের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় তবুও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার ফলে তার সম্পর্কে মক্কার লোকদের মনোভাব উপলব্ধি করা যায় তার ধনাঢ্যতা সম্পর্কে কাজী রশীদ ইবনে যুবাইর তাঁর " আযযাখায়ের ওয়াত'তুহাফ " গ্রন্থে লিখেছেন : কুরাইশদের মধ্যে যে চারজন লোক এক কিনতার ( এক কিনতার = দুশো আওকিয়া আর এক আওকিয়া = সোয়া তিন তোলা কাজেই এক কিনতার সমান ৮০ তোলার সেরের ওজনে সের ১০ তোলা ) সোনার মালিক ছিল আবু লাহাব তাদের একজন তার অর্থ লোলুপতা কি পরিমাণ ছিল বদর যুদ্ধের সময়ের ঘটনা থেকে তা আন্দাজ করা যেতে পারে যুদ্ধে তার ধর্মের ভাগ্যের ফায়সালা হতে যাচ্ছিল কুরাইশদের সব সরদার যুদ্ধে অংশ নেবার জন্য রওয়ানা হয় কিন্তু আবু লাহাব নিজে না গিয়ে নিজের পক্ষ থেকে আস ইবনে হিশামকে পাঠায় তাকে বলে দেয় , তার কাছে সে যে চার হাজার দিরহাম পায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার কারণে এর বদলে তার সেই ঋণ পরিশোধ হয়েছে বলে ধরে নেয়া হবে এভাবে সে নিজের ঋণ আদায় করার একটা কৌশল বের করে নেয় কারণ আস দেওলিয়া হয়ে গিয়েছিল ঋণ পরিশোধের কোন ক্ষমতাই তার ছিল না সে মারাত্মক ফুসকুড়ি রোগে আক্রান্ত হলে তার সম্পদ তার কোন কাজে লাগেনি এবং তার সন্তানরা তাকে অসহায়ভাবে মৃত্যু বরন করার জন্য ফেলে রেখে দিয়েছিল। তার ছেলেরা তার লাশটি মর্যাদা সহকারে কাঁধে উঠাতেও চাইল না। এভাবে সূরায় আবু লাহাব সম্পর্কে যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই তা সত্য হতে দেখলো
আবু লাহাবের স্ত্রীর নাম ছিল " আরদা " " উম্মে জামীল " ছিল তার ডাক নাম সে ছিল আবু সুফিয়ানের বোন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে শত্রুতার ব্যাপারে সে তার স্বামী আবু লাহাবের চাইতে কোন অংশে কম ছিল না হযরত আবু বকরের (রা) মেয়ে হযরত আসমা (রা) বর্ণনা করেছেন : সূরাটি নাযিল হবার পর উম্মে জামীল যখন এটি শুনলো , সে ক্রোধে ক্ষিপ্ত হয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খোঁজে বের হলো তার হাতের মুঠোয় পাথর ভরা ছিল রসূলুল্লাহকে (সা) গালাগালি করতে করতে নিজের রচিত কিছু কবিতা পড়ে চলছিল অবস্থায় সে কা'বা ঘরে পৌঁছে গেলো সেখানে রসূলুল্লাহ (সা) হযরত আবু বকরের (রা) সাথে বসেছিলেন হযরত আবু বকর বললেন , হে আল্লাহর রসূল ! দেখুন সে আসছে আমার আশংকা হচ্ছে , সে আপনাকে দেখে কিছু অভদ্র আচরণ করবে তিনি বললেন , সে আমাকে দেখতে পাবে না বাস্তবে হলোও তাই তাঁর উপস্থিতি সত্ত্বেও সে তাঁকে দেখতে পেলো না সে আবু বকরকে (রা) জিজ্ঞেস করলো , শুনলাম তোমার সাথী আমার নিন্দা করেছে হযরত আবু বকর (রা) জবাব দিলেন : ঘরের রবের কসম , তিনি তো তোমার কোন নিন্দা করেননি একথা শুনে সে ফিরে গেলো --- ( ইবনে আবু হাতেম , সীরাতে ইবন হিশাম বাযযারও প্রায় একই ধরনের একটি রেওয়ায়াত হযরত আবুদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে উদ্ধৃত করেছেন ) হযরত আবু বকরের (রা) জবাবের অর্থ ছিল , নিন্দা তো আল্লাহ করেছেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেননিতার গলার জন্য জীদ  শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে আরবী ভাষায় যে গলায় অলংকার পরানো হয়েছে তাকে জীদ বলা হয় সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব , হাসান বসরী কাতাদা বলেন : হার বিক্রি করে আমি এর মূল্য বাবদ পাওয়া সমস্ত অর্থ মুহাম্মাদের ( সা) বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক কাজ করার জন্য ব্যয় করবো কারণে জীদ শব্দটি এখানে ব্যবহার করা হয়েছে ব্যঙ্গার্থে অর্থাৎ অলংকার পরিহিত সুসজ্জিত গলায় , যেখানে পরিহিত হার নিয়ে সে গর্ব করে বেড়ায় , কিয়ামতের দিন সেখানে রশি বাঁধা হবে এটা ঠিক সমপর্যায়েরই ব্যাঙ্গাত্মক বক্তব্য যেমন কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বলা হযেছে " তাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও"
তার গলায় বাঁধা  রশিটি হবে ' মাসাদ ' ধরনের অভিধানবিদ মুফাসসিরগণ শব্দটির বহু অর্থ বর্ণনা করেছেন। সম্পর্কিত একটি বক্তব্য হচ্ছে , খুব মজবুত করে পাকানো রশিকে মাসাদ বলা হয়। দ্বিতীয় বক্তব্য হচ্ছে , খেজুর গাছের ( ডালের ) ছাল থেকে তৈরি রশি মাসাদ নামে পরিচিত। সম্পর্কে তৃতীয় বক্তব্য হচ্ছে , এর মানে খেজুরের ডালের গোড়ার দিকের মোটা অংশ থেঁতলে যে সরু আঁশ পাওয়া যায় তা দিয়ে পাকানো রশি অথবা উটের চামড়া বা পশম দিয়ে তৈরি রশি। আর একটি বক্তব্য হচ্ছে , এর অর্থ লোহার তারের পাকানো রশি