কেয়ামত ও হাশর
কোরআন উঠে না যাওয়া পর্যন্ত কেয়ামত হবে নাঃ
২৭৬. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- কুরআন যেখান থেকে এসেছে সেখানে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে না। তারপর আকাশের চর্তুদিকে মৌমাছির গুণ গুণ শব্দের মত কুরআনের গুণ গুণ শব্দ হতে থাকবে। তখন মহান ও প্রতাপশালী রব বলবেন, “তোমার কি হয়েছে?” কুরআন বলবে, “আমি তোমার কাছ থেকে বেরিয়েছিলাম এবং তোমার কাছে ফিরে আসব। আমাকে পাঠ করা হয়, কিন্তু আমার কথামত আমল করা হয় না।” তখন কুরআনকে উঠিয়ে নেয়া হবে।”
আল্লাহর মুঠোর মধ্যে আকাশ ও পৃথিবী
২৭৭. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয় কেয়ামতের দিন মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ সাতটি আকাশ এবং পৃথিবী নিজের মুঠের মধ্যে ধারণ করে বলবেন, “আমি আল্লাহ্, আমি অশীম দয়ালু, আমি রাজাধিরাজ, আমি পরম পবিত্র, আমি শান্তি, আমি রক, আমি শক্তিশালী ও মতাবান, আমি গর্বের অধিকারী। আমিই পৃথিবী সৃষ্টি করেছি যখন তা কিছুই ছিল না, আমি পুনরায় তা ফিরিয়ে আনব। শাসকগণ কোথায়? জুলুমকারীগণ কোথায়?”
উলঙ্গ ও খাৎনাবিহীন অবস্থায় সমবেত হওয়া
২৭৮. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- কেয়ামতের দিন তোমাদেরকে খালি পায়ে, উলঙ্গ ও খাৎনাবিহীন অবস্থায় সমবেত করা হবে। আর সর্বপ্রথম যাকে পোশাক পরান হবে, তিনি হচ্ছেন ইবরাহীম খলীল (আ) মহান আল্লাহ্ বলবেন, “আমার বন্ধু ইবরাহীমকে পোশাক পরাও, লোকজন যেন তার মর্যাদা বুঝতে পারে।” তারপর অপরাপর লোককে তাদের আমলের মান অনুযায়ী পোশাক পরান হবে।”
অংগ প্রত্যঙ্গের সাক্ষ্য
২৭৯. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- তোমরা আমাকে এটা জিজ্ঞেস কর না, কি জন্য আমি হেসেছি। কেয়ামতের দিন বান্দা ও তার রবের মধ্যে যে তর্ক- বিতর্ক হবে তাতে আমি আশ্চর্যম্বিত হয়েছি। বান্দা বলবে, “হে আমার রব! তুমি কি আমাকে প্রতিশ্রতি দাওনি য, আমার প্রতি তুমি জুলুম করবে না।?” আল্লাহ বলবেন, “হ্যাঁ”। বান্দা বলবে, “তবে আমি আমার নিজের সাক্ষ্য ছাড়া অপর কারো সাক্ষ্য মানব না।” তখন আল্লাহ্ বলবেন, “আমি নিজেও কি যথেষ্ট সাক্ষী নই? অথবা মর্যাদাশীল লেখক ফেরেশতারাও কি সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট নয়?” বান্দা বহুবার তা নাকচ করে দেবে। তখন তার মুখে মোহর লাগান হবে এবং তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বলতে থাকবে, পৃথিবীতে সে কি করেছিল। তখন বান্দা (মনে মনে) বলবে, “তোরা দূর হয়ে যা, তোরা ধ্বংস হ, তোদের জন্যই আমি সংগ্রাম করেছিলাম।”
পাপ পূণ্য বিনিময়
২৮০. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত প্রতিপালক বলেছেন, “বান্দার পূণ্য ও পাপসমূহ উপস্থিত করা হবে। অতঃপর তার কতগুলো পরসপরের সাথে বিনিময় করা হবে। অতপর যদি একটি পূণ্যও অবশিষ্ট থাকে তবে তা দিয়ে আল্লাহ তার জন্য বেহেশতে যাওয়ার পথ সুগম করে দেবেন।”
আমল অনুযায়ী মর্যাদাঃ
২৮১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- এক লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে, অতঃপর তার গোলামকে তার চেয়েও বেশি মর্যাদায় অধিষ্ঠিত দেখতে পাবে। সে তখন আরয করবে, “হে আমার রব! গোলাম আমার চেয়েও উচ্চতর মর্যাদায় আসীন আছে।” আল্লাহ বলবেন, “তাকে আমি তার আমলের প্রতিদান দিয়েছি। আর তোমাকে তোমার আমলের প্রতিদান দিয়েছি।”
জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে
২৮২. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- বেহেশত ও দোযখ কলহ করল। বেহেশত বলল, আমার ভেতরে দূর্বল ও দারিদ্রগণ প্রবেশ করবে এবং দোযখ বলল, জালিম ও অহংকারীগণ আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। অনন্তর আল্লাহ্ জাহান্নামকে বললেন, “তুমি আমার আযাব। তোমাকে দিয়ে যাকে ইচ্ছে আমি শাস্তি দেই।” আর বেহেশতকে বললেন, “তুমি আমার রহমত। তোমাকে দিয়ে যাকে ইচ্ছে আমি অনুগ্রহ করি। আর তোমাদের প্রত্যেকের জন্য নিজ নিজ স্থান নির্ধারিত রয়েছে।”
২৮৩ . রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “এ আমার করুনা, এর দ্বারা আমি যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করি, অর্থাৎ তা হচ্ছে জান্নাত।”
জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ প্রার্থী
২৮৪ . রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- (কেয়ামতের দিন) নিশ্চয়ই এক লোককে জাহান্নামের দিকে টেনে নেয়া হবে। তাকে দেখে জাহান্নাম সংকুচিত হতে থাকবে এবং তার একাংশ অন্য অংশকে ধরে রাখবে। তখন দয়াময় আল্লাহ্ তাকে বলবেন, “তোমার কি হয়েছে?” জাহান্নাম বলবে, “পৃথিবীতে সে সর্বদা আমার আযাব থেকে পরিত্রাণ প্রার্থনা করত। মোবারক ও মহান আল্লাহ্ তখন বলবেন, “আমার বান্দাকে ছেড়ে দাও।”
২৮৫ . রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- (কেয়ামতের দিন) সুমহান আল্লাহ্ (ফেরেশতাদেরকে) বলেবেন, “আমার বান্দার আমলনামার প্রতি দৃষ্টি ফেল। অতঃপর যাকে তোমারা দেখ যে, সে আমার কাছে বেহেশত চেয়েছিল তাকে আমি বেহেশত দেব, আর যে আমার কাছে জাহান্নাম থেকে পরিত্রান চেয়েছিল, আমি তাকে জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি দেব।”
জান্নাতীর চাষাবাদঃ
২৮৬ . রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- বেহেশতীদের মধ্যে এক লোক তার প্রতিপালকের কাছে চাষাবাদ করার অনুমতি চাইবে। আল্লাহ্ তাকে বলবেন, “তুমি যা কিছু চেয়েছিলে তা কি এখানে নেই, ” সে বলবে, হ্যাঁ সব কিছু আছে, কিন্তু আমি চাষাবাদ করতে ভালবাসি।” তারপর সে বীজ রোপন করবে, অনন্তর চোখের পলকে বিজ অঙ্কুরিত হবে, চারা বড় হবে, ছড়া বের হবে এবং ফলস কাটার উপযোগী হয়ে যাবে। তারপর তা পাহাড়ের ন্যায় স্তুপীকৃত হবে। তখন আল্লাহ্ বলবেন, “হে আদম সন্তান! লক্ষ্য কর। কোন কিছুই তোমাকে পরিতৃপ্ত করতে পারবে না।”
২৮৭ . রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ হিসাবের জন্য মানুষদেরকে সমবেত করবেন। অতঃপর দরিদ্র মু’মিনগণ কবুতর যেরূপ তাড়াতাড়ি উড়ে, সেরূপ তাড়াতাড়ি আসবে। তাদেরকে বলা হবে, “তোমরা হিসাবের জন্য দাড়াও।” তারা বলবে, “আমাদের কাছে কোন হিসাব নেই। আর হিসাব নেয়া যাবে এমন কিছু কি আপনি আমাদেরকে দান করেছিলেন? তখন আল্লাহ বলবেন, “আমার বান্দারা সত্য বলেছি।” অতএব তাদের জন্য বেহেশতের দ্বার খুলে দেয়া হবে। অনন্তর অন্যদের চেয়েও তারা সত্তর বছর আগে বেহেশতে প্রবেশ করবে।”
২৮৮ . রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- কেয়ামতের দিন গরীব মুসলমানগণ কবুতরের ন্যায় তাড়াতাড়ি চলবে। তাদেরকে বলা হবে, “হিসাবের জন্য থাম।” তারা বলবে, “আল্লাহর কসম! আমরা এরূপ কিছুই রেখে আসিনি, যার জন্য আমাদের হিসাব নেয়া হবে।” তখন মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ বলবেন, “আমার বান্দারা সত্য বলেছে।” এতএব তারা অপরাপরদের চেয়ে সত্তর বছর আগে বেহেশতে প্রবেশ করবে।”
২৮৯ . রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- কেয়ামতের দিন নিশ্চয় জনৈক বান্দা তার আমলনামা খোলা অবস্থায় দেখবে এবং তার দিকে তাকাবে। তাতে সে এরূপ কতকগুলো পূণ্য দেখতে পাবে, যা সে করেনি। সে তখন বলবে, “ইয়া রব! আমার জন্য এটা কোথা থেকে এল?” আল্লাহ্ বলবেন, “সে গীবৎ সমূহ, তোমার বিরুদ্ধে লোকেরা যা বলাবলি করেছিল অথচ তুমি তা অনুভব করনি।”