মহান আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন

الذين يقيمون الصلوة ومما رزقنهم ينفقون- اولئك هم المومنون حقا- لهم درجت عند ربهم ومغفرة ورزق كريم-

‘‘যারা নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে ব্যয় করে। তারা হল সত্যিকার ঈমানদার। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মান জনক রিযিক। [ সূরা আনফাল-৩-৪]

Pages

ছুমামাহর প্রতি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উত্তম আচরণের অনুপম নিদর্শন

ছুমামাহর প্রতি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উত্তম আচরণের অনুপম নিদর্শন



আবু  হুরায়রা  (রা:)  হ’তে  বর্ণিত  তিনি  বলেন,  একবার  রাসূল  (সাঃ) নাজদের দিকে কিছু অশ্বারোহী (সৈন্য) পাঠালেন। তারা বনী হানীফা গোত্রের জনৈক ব্যক্তিকে ধরে আনল। তার নাম ছুমামাহ বিন উছাল।সে ইয়ামামাবাসীদের সরদার। তারা তাকে মসজিদে নববীর একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখল।
রাসূল (সাঃ) তার কাছে আসলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওহে ছুমামাহ! তুমি কি মনে করছ’? সে বলল, ‘হে মুহাম্মাদ! আমার ধারণা ভালই। যদি আপনি আমাকে হত্যা করেন, তাহ’লে অবশ্যই আপনি একজন খুনীকে হত্যা করবেন। আর  যদি আপনি অনুগ্রহ করেন, তাহ’লে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপরই অনুগ্রহ করবেন। আর যদি আপনি মাল চান, তাহ’লে যা ইচ্ছা চাইতে পারেন, তা আদায় করা হবে’। তার কথা শুনে রাসূল (সাঃ) তাকে (সেদিনের মত তার নিজের অবস্থার উপর) ছেড়ে দিলেন।
অতঃপর পরের দিন নবী করীম (সাঃ) তাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওহে ছুমামাহ! তোমার কি মনে হচ্ছে’? সে জবাবে বলল, ‘তাই মনে হচ্ছে, যা আমি আপনাকে পূর্বেই বলেছি। যদি আপনি আমার প্রতি মেহেরবানী করেন, তাহ’লে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর মেহেরবানী করবেন। আর যদি আপনি হত্যা করেন, তাহ’লে একজন খুনী লোককে হত্যা করবেন। আর যদি মাল-সম্পদ চান, তাহ’লে যা ইচ্ছা চাইতে পারেন, তা দেয়া হবে’।
রাসূল (সাঃ) আজও তাকে (নিজের অবস্থার উপর) ছেড়ে দিলেন। এভাবে রাসূল (সাঃ) তৃতীয় দিনে  তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওহে ছুমামাহ! তোমার কি মনে হচ্ছে’? জওয়াবে সে বলল, ‘আমার তাই মনে হচ্ছে, যা আমি পূর্বেই আপনাকে বলেছি।যদি আপনি আমার   প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শন করেন, তাহ’লে একজন কৃতজ্ঞ  ব্যক্তির উপরই অনুকম্পা করবেন। আর যদি আপনি  আমাকে হত্যা করেন, তাহ’লে একজন খুনীকে হত্যা করবেন। আর যদি আপনি মাল-সম্পদ চান, তাহ’লে যতটা ইচ্ছা চাইতে পারেন, তা দেয়া হবে’।
অতঃপর রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘তোমরা ছুমামাহকে ছেড়ে দাও’! (তাকে ছেড়ে দেওয়া হ’ল)।
অতঃপর সে মসজিদের নিকটবর্তী একটি খেজুর বাগানে গিয়ে গোসল করল। অতঃপর মসজিদে প্রবেশ করে বলে উঠল:
আশহাদু আললা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আনণা মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু’।
‘হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ্‌ কসম! পৃথিবীর বুকে আপনার চেহারা অপেক্ষা আর কারও চেহারা আমার নিকট অধিক ঘৃণ্য ছিল না। কিন্তু এখন আপনার চেহারা আমার কাছে সবচেয়ে বেশী প্রিয় হয়ে গেছে।আল্লাহ্‌ কসম! (ইতিপূর্বে) আপনার দ্বীন অপেক্ষা অধিক অপ্রিয় দ্বীন আমার কাছে আর কোনটিই ছিল না। কিন্তু এখন আপনার দ্বীনই আমার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় হয়ে গেছে। আল্লাহ্‌ কসম! (এর আগে) আপনার শহরের চেয়ে অধিক ঘৃণ্য শহর আর কোনটিই আমার কাছে ছিল না।কিন্তু এখন আপনার শহরটিই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় হয়ে গেছে।আপনার অশ্বারোহীরা আমাকে এমন অবস্থায় ধরে এনেছে, যখন আমি ওমরাহ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলাম। এখন আপনি আমাকে কি করতে হুকুম দিচ্ছেন?
রাসূল (সাঃ) তাকে সুসংবাদ শুনালেন এবং ওমরাহ পালনের আদেশ করলেন।এরপর যখন তিনি মক্কায় পৌছলেন, তখন জনৈক ব্যক্তি তাকে বলল, তুমি না কি বেদ্বীন হয়ে গেছ? তিনি জওয়াবে বললেন, ‘তা হবে কেন; বরং আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছি।আর আল্লাহ্‌ কসম! রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অনুমতি ছাড়া তোমাদের কাছে ইয়ামামা হ’তে আর একটি গমের দানাও আসবে না’
(বুখারী হা/৪৬২, মুসলিম হা/১৭৬৪, আলবানী, মিশকাত হা/৩৯৬৪, ‘জিহাদ’অধ্যায়, ‘যুদ্ধবন্দীদের বিধান’অনুচেছদ) ।
 শিক্ষা:
উত্তম আচরণ ও ক্ষমার মাধ্যমে মানুষের হৃদয় জয় করা যায়। এজন্যই বলা হয়, ক্ষমাই উত্তম প্রতিশোধ। মহান আল্লাহ্‌ বলেন, ‘মন্দকে ভাল দ্বারা মোকাবেলা কর, ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হবে’ (হা-মীম সাজদাহ ৩৪) ।