মহান আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন

الذين يقيمون الصلوة ومما رزقنهم ينفقون- اولئك هم المومنون حقا- لهم درجت عند ربهم ومغفرة ورزق كريم-

‘‘যারা নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে ব্যয় করে। তারা হল সত্যিকার ঈমানদার। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মান জনক রিযিক। [ সূরা আনফাল-৩-৪]

Pages

আবূ নাজীহ (রা:)-এর ইসলাম গ্রহণ

আবূ নাজীহ আমর ইবনু আবাসাহ আস-সুলামী (রা:) বলেন, জাহেলী যুগ আমি ধারণা করতাম যে, লোকেরা পথভ্রষ্টতার উপর রয়েছে এবং এরা কোন ধর্মেই নেই। আর ওরা প্রতিমা পূজা করছে। অতঃপর আমি এক ব্যক্তির ব্যাপারে শুনলাম যে, তিনি মক্কায় অনেক আশ্চর্য খবর বলছেন। সুতরাং আমি আমার সওয়ারীর উপর বসে তাঁর কাছে এসে দেখলাম যে, তিনি আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ)।
তিনি গোপনে (ইসলাম প্রচার করছেন), আর তাঁর সম্প্রদায় (মুশরিকরা) তাঁর প্রতি দুর্ব্যবহার করছে। সুতরাং আমি বিচক্ষণতার সাথে কাজ করলাম। আমি মক্কায় তাঁর কাছে পরামর্শ করলাম। অতঃপর আমি তাঁকে বললাম, আপনি কে?
তিনি বললেন, ‘আমি নবী’।
আমি বললাম, নবী কি?
তিনি বললেন, ‘মহান আল্লাহ্‌ আমাকে প্রেরণ করেছেন।
আমি বললাম, তিনি কি দিয়ে প্রেরণ করেছেন?
তিনি বললেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখা,মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা, আল্লাহ্‌কে একক উপাস্য মানা এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করার নির্দেশ দিয়ে।
আমি বললাম, এ কাজে আপনার সঙ্গে কে আছে?
তিনি বললেন, ‘একজন স্বাধীন এবং একজন কৃতদাস। তিনি বলেন, তার প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তার মধ্যে তখন তাঁর সঙ্গে আবূ বকর ও বেলাল (রা:) ছিলেন।
আমি বললাম, ‘আমিও আপনার অনুগত।
তিনি বললেন, ‘তুমি এখন এ কাজ কোন অবস্থাতেই করতে পারবে না। তুমি কি আমার অবস্থা ও লোকদের অবস্থা দেখতে পাচ্ছ না? অতএব তুমি (এখন) বাড়ি ফিরে যাও। অতঃপর যখন তুমি আমার জয়ী ও শক্তিশালী হওয়ার সংবাদ পাবে, তখন আমার কাছে এস।
সুতরাং আমি আমার পরিবার-পরিজনের নিকট চলে গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনায় চলে এলেন। আর আমি পরিবারের সদস্যদের সাথেই ছিলাম। অতঃপর আমি খবরাখবর নিতে আরম্ভ করলাম এবং যখন তিনি মদীনায়  আগমন  করলেন,  তখন  আমি  (তাঁর  ব্যাপারে)  লোকদেরকে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম। অবশেষে আমার নিকট মদীনার কিছু লোক এলো।
আমি বললাম, ঐ লোকটার অবস্থা কি, যিনি (মক্কা ত্যাগ করে) মদীনায় এসেছেন?
তারা বলল, লোকেরা তাঁর দিকে দ্রুত ধাবমান। তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে হত্যা করার ইচ্ছা করেছিল; কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হয়নি।
অতঃপর আমি মদীনায় এসে তাঁর খিদমতে হাযির হলাম। তারপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ)! আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন?
তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি তো ঐ ব্যক্তি, যে মক্কায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলে।
আমি  বললাম,  হ্যাঁ। হে  আল্লাহ্‌র   রাসূল  (সাঃ)!  আল্লাহ্‌ তাআলা আপনাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন এবং যা আমার অজানা, তা আমাকে বলুন? আমাকে ছালাত সম্পর্কে বলুন।
তিনি বললেন, তুমি ফজরের ছালাত পড়। তারপর সূর্য এক বল্লম পরিমাণ উঁচু হওয়া পর্যন্ত বিরত থাক। কারণ তা শয়তানের  দু’শিং-এর মধ্যভাগে উদিত হয় (অর্থাৎ এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে) এবং সে সময় কাফেররা তাকে সিজদা করে। পুনরায় তুমি ছালাত আদায় কর। কেননা ছালাতে ফেরেশতা সাক্ষী ও উপস্থিত হন, যতক্ষণ না ছায়া বল্লমের সমান হয়ে যায়। অতঃপর ছালাত থেকে বিরত হও। কেননা তখন জাহান্নামের আগুন উস্কানো হয়। অতঃপর যখন ছায়া বাড়তে আরম্ভ করে, তখন ছালাত আদায় কর। কেননা এ ছালাতে ফেরেশতা সাক্ষী ও উপস্থিত হন। পরিশেষে তুমি আছরের ছালাত আদায় কর। অতঃপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত ছালাত আদায় করা থেকে বিরত থাক। কেননা সূর্য শয়তানের দু’শিং-এর মধ্যে অস্ত যায় (অর্থাৎ এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে) এবং তখন কাফেররা তাকে সিজদা করে।
পুনরায় আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্‌র নবী (সাঃ)! আপনি আমাকে ওযূ সম্পর্কে বলুন?
তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ পানি নিয়ে (হাত ধোয়ার পর) কুলি করবে এবং নাকে পানি নিয়ে ঝেড়ে পরিষ্কার করবে, তার চেহারা, তার মুখ এবং নাকের গুনাহসমূহ ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন আল্লাহ্‌র আদেশ অনুযায়ী তার চেহারা ধৌত করে, তখন তার চেহারার পাপরাশি তার দাড়ির শেষ প্রান্তের পানির সাথে ঝরে যায়। তারপর সে যখন তার হাত দু’খানি কনুই পর্যন্ত ধৌত করে, তখন তার হাতের পাপরাশি তার আঙ্গুলের পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন তার মাথা মাসাহ করে, তখন তার মাথার পাপরাশি চুলের ডগার পানির সাথে ঝরে যায়। তারপর সে যখন তার পা দু’খানি গিট পর্যন্ত ধৌত করে, তখন তার  পায়ের  পাপরাশি  তার আঙ্গুলের পানির সাথে  ঝরে  যায়। অতঃপর সে যদি দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করে, আল্লাহ্‌র প্রশংসা ও তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা করে, যার তিনি যোগ্য এবং অন্তরকে আল্লাহ্‌ তাআলার জন্য খালি করে, তাহলে সে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে বেরিয়ে আসে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল।
তারপর আমর ইবনু আবাসাহ (রা:) এ হাদীছটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ছাহাবী আবূ উমামা (রা:)-এর নিকট বর্ণনা করলেন।
আবূ উমামাহ (রা:) তাঁকে বললেন, ‘হে আমর ইবনু আবাসাহ! তুমি যা বলছ, তা চিন্তা করে বল!  একবার ওযূ করলেই কি এই ব্যক্তিকে এতটা মর্যাদা দেওয়া হবে? আমর বললেন, হে আবূ উমামাহ! আমার বয়স ঢের হয়েছে, আমার হাড় দুর্বল হয়ে গেছে এবং আমার মৃত্যুও নিকটবর্তী। (ফলে এ অবস্থায়) আল্লাহ্‌ তাআলা অথবা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রতি মিথ্যারোপ করার কি প্রয়োজন আছে? যদি আমি এটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট থেকে একবার, দুবার, তিনবার এমনকি সাতবার পর্যন্ত না শুনতাম, তাহলে কখনোই তা বর্ণনা করতাম না। কিন্তু আমি তার নিকট এর চেয়েও অধিকবার শুনেছি’ (মুসলিম হা/৮৩২, ‘মুসাফিরের ছালাত’অধ্যায়)।

শিক্ষা:

১. দ্বীনী বিষয় জানার জন্য আগ্রহ থাকতে হবে।
২. পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আউয়াল ওয়াক্তে আদায় করতে হবে।
৩. ওযূর মাধ্যমে বান্দা তার পাপরাশি মোচন করে নিতে পারে।