·· ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পড়া উত্তম
·
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, أَمَرَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ أُنَادِيَ أَنَّهُ لاَ صَلاَةَ إِلاَّ بِقِرَاءَةِ فَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَمَا زَادَ- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে নির্দেশ দেন যেন আমি এই কথা ঘোষণা করে দেই যে, ছালাত সিদ্ধ নয় সূরায়ে ফাতিহা ব্যতীত। অতঃপর অতিরিক্ত কিছু’।[25] এখানে প্রথমে সূরায়ে ফাতিহা, অতঃপর কুরআন থেকে যা সহজ মনে হয়, সেখান থেকে অতিরিক্ত কিছু পড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
·
আনাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে বলেন, أَتَقْرَءُوْنَ فِيْ صَلاَتِكُمْ خَلْفَ الْإِمَامِ وَالْإِمَامُ يَقْرَأُ ؟ فَلاَ تَفْعَلُوْا وَلْيَقْرَأْ أَحَدُكُمْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فِيْ نَفْسِهِ، أَخْرَجَهُ ابْنُ حِبَّانَ- ‘তোমরা কি ইমামের ক্বিরাআত অবস্থায় পিছনে কিছু পাঠ করে থাক? এটা করবে না। বরং কেবলমাত্র সূরায়ে ফাতিহা চুপে চুপে পাঠ করবে’।[26]
·
ইমাম
আবু হানিফা (রহঃ) ও
ইমাম মুহাম্মাদের (রহঃ) এই মসলায় দুটি কওল রয়েছে ।একটি হল, মুক্তাদির জন্য সুরা ফাতেহা পড়া না ওয়াজেব না সুন্নাত । আর এটা তাদের প্রথম সিদ্ধান্ত । ইমাম মোহাম্মদ তাঁর প্রথম লেখনীর ভিতরে ঐ উক্তিটি অর্থাৎ প্রথম মতটি তুলে ধরেছিলেন আর সেই লেখনী গুলি বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল । এইজন্য তাঁদের প্রথম সিদ্ধান্তটি বেশি প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে । দ্বিতীয় সিদ্ধান্তটি হল, মুক্তাদির জন্য ইমামের পিছিনে সুরা ফাতেহা পড়া সর্তকতা মুলক ভাবে উত্তম দেখুন (গাইসুল গাম্মাম হাশিয়া ইমামুল কালাম ১৫৬ পৃঃ);
বাদশা আলমগীরের ওস্তাদ মোল্লাজিওন (রহঃ) বলেন- সুফী কেরামদের জামাত এবং মাশায়েখে হানাফীয়াদের যদি দেখ তাহলে তোমরা জানতে পারবে এসব বুজুর্গানে দীন ইমামের পিছনে সুরা ফাতেহা পড়া মুক্তাদিদের জন্য ‘মুস্তাহসান’ উত্তম জানতেন(তাফসীরে আহমাদী ২৮১ পৃঃ)
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) ও মোহাম্মাদ (রহঃ) এর নিকট ইমামের পিছনে সুরা ফাতেহা পড়ায় কোন অসুবিধা নাই (জামে রমুজ ১ম খন্ড ৭৬ পৃঃ; মিসখুল খেতাম ১ম খন্ড ২১৯ পৃঃ);
ইমামের পিছনে সুরা ফাতেহা পড়া সতর্কতামুলক মুস্তাহসান বা উত্তম (হেদায়া ১ম খন্ড ১০১ পৃঃ);
আমাদের অনেক ফুকাহায়ে হানাফী সকল নামাযে মুক্তাদির জন্য ইমামের পিছনে সুরা ফাতেহা পড়া মুস্তাহসান বা উত্তম জানতেন (উমদাতুল কারী শরাহ বুখারী ৩য় খন্ড ২৯ পৃঃ);
যদি ইমাম জোরে পড়ে তাহলে মুক্তাদি ইমামের সাক্তার সময় পড়বে । আর যদি ইমাম আস্তে আস্তে পড়ে কেরাত পড়ে তাহলে মুক্তাদি যখন খুশি পড়বে তার ইচ্ছা । সুরা ফাতেহার ব্যাপারে এ পদ্ধতিটা অনুসরণ করা উচিত । যাতে ইমামের কেরাতের অসুবিধা না হয় ।অর্থাৎ আস্তে আস্তে পড়বে আর ইমামের পিছনে পড়াটাই আমার কাছে উত্তম (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা ২য় খন্ড ৯ পৃঃ);
ইমামের সাক্তার সময় যদি সুরা ফাতেহা পড় তাহলে অসুবিধা নাই (সাবিলুর রশাদ ২০, ২১);
মুক্তাদির জন্য সুরা ফাতেহা পড়া (মুবাহ্) বৈধ, অন্য কিছু নৈধ নয় (ফসলুল খেতাব ১১৮, ২৭৮ পৃঃ);
বাংলাদেশের শামসুল হক ফরিদপুরী (সদর সাহেব হুজুর রহঃ) তিনি বলেন- যদি কোন হানাফী মাযহাবের লোক জোরে আমিন বলে এবং ইমামের পিছনে সুরা ফাতেহা পড়ে তাহলে তার হানাফিয়াত টুটিয়া যাইবে না বরং আরও মজবুত হইবে (ওসিয়াতনামায় ৭ নং ওসিয়াত);
ইমামের পিছনে সুরা ফাতেহা পড়ার আরও দলিল দেখুন (মিশকাত-মাওলানা নুর মোহাম্মাদ আযমী ২য় খন্ড হাঃ ৭৬৫, ৭৬৬, ৭৯৪; মিশকাত মাদ্রাসার পাঠ্য ২য় খন্ড হাঃ ৭৬৫, ৭৬৬, ৭৯৪; বাংলা অনুবাদ বুখারি মাওলানা আজীজুল হক ১ম খন্ড হাঃ ৪৪১;সহিহ আল বুখারি আঃ প্রঃ ১ম খন্ড হাঃ ৭১২; সহিহুল বুখারী তাঃ পাঃ ১ম খন্ড হাঃ ৭৫৬;বুলগুল মারাম ইবনু হাজার আসকালানী ১ম খন্ড হাঃ ২১৭;
বুখারী শরীফ ইঃ ফাঃ ২য় খন্ড হাঃ ৭১৮; মুসলিম শরীফ ইঃ ফাঃ ২য় খন্ড হাঃ ৭৫৮,৭৫৯, ৭৬০, ৭৬১; আবু দাউদ ইঃ ফাঃ ১ম খন্ড হাঃ ৮২১, ৮২২, ৮২৩, ৮২৪; তিরমিযী শরীফ ইঃ ফাঃ ১ম খন্ড হাঃ ২৪৭; ইবনে মাযাহ ইঃ ফাঃ ১ম খন্ড হাঃ ৮৩৭, ৮৩৮;মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ ইঃ ফাঃ হাঃ ১১৫; মুয়াত্তা ইমাম মালিক ইঃ ফাঃ ১ম খন্ড রেওয়ায়েত ২৩৫, ২৩৬; বেহেশতি জেওর ২য় খন্ড নামাযের ওয়াজিব মাসআলা ২ ও ৩;জামে তিরমিযী মাওলানা আব্দুন নুর সালাফী ১ম খন্ড হাঃ ২৯৮)