স্রষ্ঠা ও সৃষ্টি
আয়াত:
لَّوْ أَرَادَ اللَّهُ أَن يَتَّخِذَ وَلَدًا لَّاصْطَفَىٰ مِمَّا يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ سُبْحَانَهُ ۖ هُوَ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ﴾
ব্যাক্ষা:
আল্লাহ
যদি কাউকে পুত্র হিসেবে
গ্রহণ করতে চাইতেন তাহলে
তাঁর সৃষ্টিকুলের মধ্যে যাকে ইচ্ছা
বাছাই করে নিতেন৷ ৮ তিনি এ থেকে
পবিত্র (যে, কেউ তাঁর
পুত্র হবে)৷ তিনি
আল্লাহ৷ তিনি একক ও
সবার ওপর বিজয়ী৷
অর্থাৎ
আল্লাহর ছেলে
হওয়া
একেবাররেই অসম্ভব। যা
সম্ভব
তা
হচ্ছে
, আল্লাহ
কাউকে
বাছাই
করে
নিতে
পারেন। আর
যাকে
তিনি
বাছাই
করবেন
সে
অবশ্যই
সৃষ্টির মধ্যেকার কেউ
হবে। কারণ
পৃথিবীতে আল্লাহ
ছাড়া
আর
যা
কিছু
আছে
সবই
সৃষ্টি
। এ কথাও
সবার
জানা
যে
সৃষ্টি
যত
সম্মানিতই হোক
সে
কখনো
সন্তানের মর্যাদা পেতে
পারে
না। কারণ
স্রষ্টা ও
সৃষ্টির মধ্যে
বিরাট
মৌলিক
ঐক্যের
দাবী
করে। সাথে
সাথে
এ
বিষয়টির প্রতিও
লক্ষ
রাখতে
হবে
যে
, " আল্লাহ
যদি
কাউকে
ছেলে
বানাতে
চাইতেন
তাহরে
এ
রকম
করতেন
" কথাটি
ব্যবহার করা
হয়েছে।
একথা
থেকে
স্বতই
এ
অর্থ
প্রকাশ
পায়
যে
, আল্লাহ
কখনো
এরূপ
বেটা
হিসেবে
গ্রহণ
করা
তো
দূরের
কথা
এরূপ
করার
ইচ্ছাও
আল্লাহ
কখনো
পোষণ
করেননি।
তিনি
আসমান ও যমীনকে যুক্তিসঙ্গত
ও বিজ্ঞোচিতভাবে সৃষ্টি করেছেন৷ তিনিই
দিনের প্রান্তসীমায় রাতকে এবং রাতের
প্রান্তসীমায় দিনকে জড়িয়ে দেন৷
তিনি সুর্য ও চাঁদকে
এমনভাবে অনুগত করেছেন যে,
প্রত্যেকেই একটি নির্দিষ্ট সময়
পর্যন্ত গতিশীল আছে৷ জেনে
রাখো, তিনি মহা পরাক্রমশালী
ও ক্ষমাশীল৷অর্থাৎ এমন মহাপরাক্রমশালী যে
, তিনি যদি তোমাদের আযাব
দিতে চান তাহলে কোন
শক্তিই তা রোধ করতে
সক্ষম নয়। কিন্তু
এটা তাঁর মেহেরবানী যে
তোমরা এসব অপরাধ ও
অবমাননা করা সত্ত্বেও তখনই
তোমাদের পাকড়াও করছেন না
, বরং একের পর এ
অবকাশ দিয়ে যাচ্ছেন ।
এখানে শান্তি দেয়ার ব্যাপারে
তাড়াহুড়া না করা এবং
অবকাশ দেয়াকে ক্ষমা (দেখেও
না দেখা ) বলে উল্লেখ
করা হয়েছে।
আয়াত:
﴿خَلَقَكُم مِّن
نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ ثُمَّ
جَعَلَ
مِنْهَا زَوْجَهَا وَأَنزَلَ لَكُم
مِّنَ
الْأَنْعَامِ ثَمَانِيَةَ أَزْوَاجٍ ۚ
يَخْلُقُكُمْ فِي بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ خَلْقًا مِّن بَعْدِ خَلْقٍ فِي
ظُلُمَاتٍ ثَلَاثٍ ۚ
ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ لَهُ
الْمُلْكُ ۖ
لَا
إِلَٰهَ إِلَّا
هُوَ
ۖ
فَأَنَّىٰ تُصْرَفُونَ﴾
ব্যাক্ষা:
তিনি
তোমাদের একটি প্রাণী থেকে
সৃষ্টি করেছেন এবং তা
থেকে তার জোড়াও সৃষ্টি
করেছেন৷ আর তিনিই তোমাদের
জন্য চতুস্পদ জন্তুর আটজোড়া নর
ও মাদি সৃষ্টি করেছেন৷
তিনি তোমাদেরকে মায়ের গর্ভে তিন
তিনটে অন্ধকার পর্দার অভ্যন্তরে একের
পর এক আকৃতি দান
করে থাকেন৷ এ আল্লাহই (যার
এ কাজ) তোমাদের ‘রব’
তিনিই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, তিনি ছাড়া আর
কোন উপাস্য নেই, তা
সত্ত্বেও তোমাদেরকে কোন্দিকে ফিরিয়ে
নেয়া হচ্ছে৷
একথার
অর্থ এ নয় যে
, প্রথমে হযরত আদম থেকে
মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং
পরে তার স্ত্রী হাওয়াকে
সৃষ্টি করেছেন। এখানে
বক্তব্যের মধ্যে সময়ের পরস্পরার
প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে বর্ণনার
পরস্পরার প্রতি গুরুত্ব আরোপ
করা হয়েছে। প্রত্যেক
ভাষায়ই এ ধরনের দৃষ্টান্ত
বর্তমান। যেমন
: আমরা বলি তুমি আজ
যা করেছো তা জানি
এবং গতকাল যা করেছো
তাও আমার জানা আছে
এ ধরনের বর্ণনার অর্থ
এ নয় যে , গতকালের
ঘটনা আজকের পরে সংঘটিত
হয়েছে
অন্যকথায় এখানে
যুক্তি
পেশ
করা
হচ্ছে
যে
, তিনিই
যখন
তোমাদের প্রভু
এবং
সমস্ত
রাজত্ব
তাঁরই
তখন
নিশ্চিতভাবে তোমাদের ইলাহও
(উপাস্য
) তিনিই
। অন্য কেউ
কি
করে
ইলাহ
হতে
পারে
যখন
প্রতিপালনের ক্ষেত্রে তার
কোন
অংশ
নেই। এবং
রাজত্বের ক্ষেত্রেও তার
কোন
দখল
নেই
। তোমাদের বিবেক
- বুদ্ধির কাছে
একথা
কি
করে
গ্রহণযোগ্য হতে
পারে
যে
, যমীন
আসমানের সৃষ্টিকর্তা হবেন
আল্লাহ
এবং
সূর্য
ও
চন্দ্রকে আনুগত্য গ্রহণকারী আর
রাতের
পর
দিন
ও
দিনের
পর
রাত
আনয়নকারীও হবেন
আল্লাহ
। তাছাড়া তোমাদের নিজেদের এবং
সমস্ত
জীব
- জন্তুর
স্রষ্টা ও
পালনকর্তাও হবেন
আল্লাহ
অথচ
তোমাদের উপাস্য
হবে
তিনি
ছাড়া
অন্যরা
৷
একথাটি
চিন্তা
করে
দেখার
মত।
এখানে
একথা
বলা
হয়নি
যে
, তোমরা
কোথায়
ফিরে
যাচ্ছো
৷
বরং
বলা
হয়েছে
এই
যে
, তোমাদের কোথায়
ফিরিয়ে
নিয়ে
যাওয়া
হচ্ছে
৷
অর্থাৎ
অন্য
কেউ
তোমাদের বিপথগামী করছে
এবং
তোমরা
তার
প্রতারণার ফাঁদে
পড়ে
সাদামাটা যুক্তিসংগত কথাও
বুঝতে
পারছো
না
। এ বর্ণনাভঙ্গি থেকে
দ্বিতীয় যে
কথাটি
প্রতীয়মান হয়
তা
হচ্ছে
' তোমরা
' বলে
সম্বোধন করে
যারা
ফিরিয়ে
নিচ্ছে
তাদেরকে সম্বোধন করা
হয়নি
, বরং
যারা
তাদের
প্রভাবে পড়ে
ফিরে
যাচ্ছিলো তাদেরকে সম্বোধন করা
হয়েছে।
এর
মধ্যে
একটি
সূক্ষ্ম বিষয়
রয়েছে
, কিছুটা
চিন্তা
- ভাবনা
করলে
যা
সহজেই
বোঝা
যায়।
যারা
ফিরিয়ে
নিচ্ছিলো তারা
সে
সমাজে
সবার
চোখের
সামনেই
ছিলো
এবং
সবখানে
প্রকাশ্যেই কাজ
করছিলো। তাই
তাদের
নাম
নিয়ে
বলার
প্রয়োজন ছিলো
না।
তাদের
সরাসরি
সম্বোধন করাও
ছিলো
নিরর্থক। কারণ
, তারা
নিজেদের স্বার্থের জন্যই
মানুষকে এক
আল্লাহর দাসত্ব
থেকে
ফিরতে
এবং
অন্যদের দাসত্বে শৃঙ্খলিত করতে
এবং
করিয়ে
রাখতে
প্রচেষ্টা চালিয়ে
যাচ্ছিলো। এটা
জানা
কথা
যে
, এ
ধরনের
লোকদের
বুঝালেও তারা
তা
বুঝতে
রাজি
ছিল
না।
কারণ
, না
বুঝার
মধ্যেই
তাদের
স্বার্থ নিহিত
ছিল
এবং
বুঝার
পরও
তারা
তাদের
স্বার্থ ত্যাগ
করতে
আদৌ
প্রস্তুত ছিল
না।
তবে
জনসাধারণ যারা
তাদের
প্রতারণা ও
চতুরতার ফাঁদে
পতিত
হচ্ছিলো তারা
ছিল
করুণার
পাত্র।
এ
কারবারে তাদের
কোন
স্বার্থ ছিল
না।
তাই
তাদেরকে বুঝালে
বুঝতে
পারতো
এবং
চোখ
কিছুটা
খুলে
যাওয়ার
পরে
তারা
এও
দেখতে
পারতো
যে
, যারা
তাদেরকে আল্লাহর নিকট
থেকে
সরিয়ে
অন্যদের আস্তানার পথ
দেখাচ্ছে তারা
তাদের
এ
কারবার
থেকে
কি
স্বার্থ হাসিল
করছে।
এ
কারণেই
গোমরাহীতে নিক্ষেপকারী মুষ্টিমেয় লোকদের
থেকে
মুখ
ফিরিয়ে
গোমরাহীর দিকে
অগ্রসরমান জনসাধারণকে সম্বোধন করা
হচ্ছে।