মহান আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন

الذين يقيمون الصلوة ومما رزقنهم ينفقون- اولئك هم المومنون حقا- لهم درجت عند ربهم ومغفرة ورزق كريم-

‘‘যারা নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে ব্যয় করে। তারা হল সত্যিকার ঈমানদার। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মান জনক রিযিক। [ সূরা আনফাল-৩-৪]

Pages

ইউসুফ (আ:)এর বাল্যকাল অধ্যায়:

ইউসুফ (আ:)এর বাল্যকাল অধ্যায়:

ইউসুফ তার বাপকে বললো : “আব্বাজান! আমি স্বপ্ন দেখেছি, এগারটি তারকা এবং সূর্য চাঁদ আমাকে সিজদা করছে৷” জবাবে তার বাপ বললো : “হে পুত্র! তোমার স্বপ্ন তোমার ভাইদেরকে শুনাবে না ; শুনালে তারা তোমার ক্ষতি করার জন্য পেছনে লাগবে৷ আসলে শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু এখানে হযরত ইউসুফের () দশজন বৈমাত্রেয় ভাইয়ের কথা বলা হয়েছে হযরত ইয়াকূব () জানতেন বৈমাত্রেয় ভাইয়েরা ইউসুফকে () হিংসা করে নৈতিক দিক দিয়েও তারা এমন পর্যায়ের সচ্চরিত্র ছিল না যে, নিজেদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ করার জন্য কোন অবৈধ কাজ করতে কুন্ঠিত হবে তাই তিনি নিজের সদাচারী পুত্রকে বলে দিলেন, তাদের থেকে সাবধান থেকো স্বপ্নের পরিষ্কার অর্থ ছিল এইঃ সূর্য মানে হযরত ইয়াকূব (), চাঁদ মানে তাঁর স্ত্রী (হযরত ইউসূফের বিমাতা) এবং এগারটি তারকা মানে এগারটি ভাইতার ভাইয়েরা পরস্পর বলাবলি করলো, “ ইউসুফ তার ভাই, এরা দুজন আমাদের বাপের কাছে আমাদের সবার চাইতে বেশী প্রিয়, অথচ আমরা একটি পূর্ণ সংঘবদ্ধ দল৷ সত্যি বলতে কি আমাদের পিতা একেবারেই বিভ্রান্ত হয়ে গেছেন৷ এখানে হযরত ইউসুফের সহোদর ভাই বিন ইয়ামীনের কথা বলা হয়েছে ভাইটি তার থেকে কয়েক বছরের ছোট ছিল তার জন্মের সময় তার মায়ের ইন্তিকাল হয় কারণে হযর ইয়াকূব দু'টি মাতৃহীন সন্তানের প্রতি একটু বেশী নজর দিতেন ছাড়াও স্নেহের আর একটি কারণ ছিল এই যে, তাঁর সব ছেলের মধ্যে একমাত্র হযরত ইউসুফই এমন ছিলেন যার মধ্যে তিনি সৌভাগ্য সত্য সঠিক পথের সন্ধান লাভের লক্ষণ দেখেছিলেন হযরত ইউসুফের স্বপ্নের কথা শুনে তিনি যাকিছু বলেছিলেন ওপরে তার যে বর্ণনা এসেছে তা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, তিনি নিজের ছেলেটির অসাধারণ যোগ্যতা সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই জানতেন অন্যদিকে সামনের দিকে যেসব ঘটনার প্রকাশ ঘটেছে তা থেকে তাঁর বাকি দশ ছেলের চারিত্রক মান সুস্পষ্ট হয়ে যায় ক্ষেত্রে কোন সৎব্যক্তি ধরনের সন্তানদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবেন একথা কেমন করে আশা করা যেতে পারে৷ কিন্তু বাইবেলের বর্ণনায় অবাক হতে হয় সেখানে ইউসুফের প্রতি তাঁর ভাইদের হিংসার এমন একটি কারণ বর্ণনা করা হয়েছে যার ফলে উল্টো হযরত ইউসুফই দোষী সাব্যস্ত হন বাইবেলের বর্ণনা মতে হযরত ইউসুফ তাঁর পিতার কাছে ভাইদের বিরুদ্ধে চুগলখোরী করতেন কারণে তাঁর ভাইয়েরা তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল চলো আমরা ইউসুফকে মেরে ফেলি অথবা তাকে কোথাও ফেলে দেই, যাতে আমাদের পিতার দৃষ্টি কেবল আমাদের দিকেই ফিরে আসে৷ কাজটি শেষ করে তারপর তোমরা ভালো লোক হয়ে যাবে৷এ কথায় তাদের একজন বললো, “ইউসুফকে মেরে ফেলো না৷ যদি কিছু করতেই হয় তাহলে তাকে কোন অন্ধ কুপে ফেলে দাও, আসা-যাওয়ার পথেকোন কাফেলা তাকে তুলে নিয়ে যাবে৷” রাতে তারা কাঁদতে কাঁদতে তাদের বাপের কাছে আসলো  বললো, “আব্বাজান! আমরা দৌঁড় প্রতিযোগিতা করছিলাম এবং ইউসুফকে আমাদের জিনিসপত্রের কাছে রেখে গিয়েছিলাম, ইতিমধ্যে নেকড়েবাঘ এসে তাকে খেয়ে ফেলেছে৷ আপনি তো আমাদের কথা বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যবাদী৷ঘটনাটা সহজভাবে বলতে গেলে এরূপ বলা যায় যে, ইউসুফের ভাইয়েরা হযরত ইউসুফকে কূপের মধ্যে ফেলে দিয়ে চলে যায় পরে কাফেলার লোকজন এসে তাকে সেখান থেকে বের করে আনে তারা তাকে মিসরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে কিন্তু বাইবেলের বর্ণনা হচ্ছে, ইউসুফের ভাইয়েরা পরে ইসমাঈলীদের একটি কাফেলা দেখে ইউসুফকে কূয়া থেকে বের করে তাদের হাতে বিক্রি করে দিতে চায় কিন্তু তার আগেই মাদয়ানের সওদাগর তাকে কূয়া থেকে বের করে ফেলে সওদাগরেরা বিশ দিরহামে ইউসুফকে ইসমাঈলীদের হাতে বিক্রি করে দেয় সামনের দিকে গিয়ে বাইবেল লেখকরা একথা ভুলে যান যে, ইতিপূর্বে তারা ইউসুফকে ইসমাঈলীদের হাতে বিক্রি করে দিয়ে এসেছেন তাই তারা ইসমাঈলীদের পরিবর্তে আবার মাদায়ানের সওদাগরদের দ্বারা তাঁকে মিসরীয়দের হাতে বিক্রি করাচ্ছেন  অন্যদিকে তালমূদের বর্ণনা হচ্ছে, মাদয়ানের সওদাগরেরা ইউসুফকে কূয়া থেকে বের করে এনে নিজেদের গোলামে পরিণত করে অবশেষে তারা বিশ দিরহাম মূল্য পরিশোধ করে ইউসুফের ভাইদেরেকে রাজি করে তারপর তারা বিশ দিরহামের বিনিময়েই ইউসুফকে ইসমাঈলীদের হাতে বিক্রি করে আর ইসমাঈলীলা মিসরে গিয়ে তাকে বিক্রি করে এখান থেকেই মুসলমানদের মধ্যে বর্ণণা প্রচলন হয়েছে যে, ইউসুফের ভাইয়েরা ইউসুফকে বিক্রি করে কিন্তু জানা উচিত, কুরআন সমস্ত বর্ণনা সমর্থন করেনিমিসরে যে ব্যক্তি তাকে কিনেছিল সে তার স্ত্রীকে বললো, “একে ভালোভাবে রাখো, বিচিত্র নয় সে আমাদের জন্য উপকারী প্রমাণিত হবে এবং আমরা তাকে পুত্র বানিয়ে নেবো৷
বাইবেলে ব্যক্তির নাম লেখা হয়েছে "পোটীফর" সামনের দিকে গিয়ে কুরআন মজীদ একে "আযীয" নামে উল্লেখ করেছে তারপর আবার এক জায়গায় হযরত ইউসুফের জন্যও উপাধি ব্যবহার করা হয়েছে থেকে জানা যায়, তিনি ছিলেন মিসরের কোন বড় অফিসার অথবা পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি কারণ "আযীয" মানে হচ্ছে এমন কর্তৃত্ব সম্পন্ন ব্যক্তি যার ক্ষমতাকে প্রতিহত করা যেতে পারে না বাইবেল তালমূদের বর্ণনা হচ্ছে, তিনি ছিলেন বাদশাহর রক্ষক সেনাপতি (দেহরক্ষী বাহিনীর প্রধান) ইবনে জারীর হযরত আবুদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে রেওয়ায়াত করেছেন যে, তিনি ছিলেন রাজকীয় অর্থ বিভাগের প্রধান
তালমূদে মাহিলাটিকে যালীখা (Zelicha) নামে উল্লেখ করা হয়েছে। এখান থেকেই নামটি মুসলমানদের বর্ণনায় প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। কিন্তু আমাদের এখানে সাধারণভাবে প্রচলিত হয়ে গেছে যে, পরবর্তীকালে হযরত ইউসুফের সাথে মহিলাটির বিয়ে হয়ে যায়। একথাটির আসলে কুরআনে বা ইসরাঈলী ইতিহাসে কোন ভিত্তি নেই। একজন নবী এমন একটি মহিলাকে বিয়ে করবেন যার অসতিপনা তাঁর নিজের অভিজ্ঞতায়ই ধরা পড়েছে-এটা আসলে তাঁর নবী সুলভ মর্যাদার তুলনায় অনেক নিম্নমানের। কুরআন মজীদে ব্যাপারে যে সাধারণ নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে তা হচ্ছে এই যেঃ"অসৎ মেয়েরা অসৎ পুরুষদের জন্য এবং অসৎ পুরুষরা অসৎ মেয়েদের জন্য আর পবিত্র মেয়েরা পবিত্র পুরুষদের জন্য এবং পবিত্র পুরুষরা পবিত্র পবিত্র মেয়েদের জন্য।"
তালমূদের বর্ণনামতে সময় হযরত ইউসুফের বয়স ছিল ১৮ বছর। পোটীফর তাঁর গাম্ভীর্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব দেখে বুঝতে পেরেছিলেন যে, যুবক গোলাম নয় বরং কোন অভিজাত পরিবারের আদরের দুলাল এবং অবস্থার আবর্তন তাকে এখানে টেনে এনেছে। তাকে কেনার সময়ই তিনি সওদাগরদের বলেনঃ ছেলে তো কোন গোলাম বলে মনে হচ্ছে না, আমার সন্দেহ হচ্ছে তোমরা একে কোথাও থেকে চুরি করে এনেছো কারণে পোটীফর তাঁর সাথে দাস সুলভ ব্যবহার করেননি। বরং তাঁর ওপর নিজের গৃহের এবং নিজের যাবতীয় সম্পদ-সম্পত্তি পরিচালনার একচ্ছত্র দায়িত্ব অর্পণ করেন। বাইবেলের বর্ণনা মতে "তিনি নিজের সবকিছু ইউসুফের হাতে ছেড়ে দেন এবং শুধুমাত্র খাবার রুটি টুকু ছাড়া নিজের আর কোন জিনিসেরই তাঁর খবর ছিল না।" পর্যন্ত হযরত ইউসুফের জীবন গড়ে উঠেছিল বিজন মরু প্রান্তরে আধা যাযাবর পশুপালকদের পরিবেশে। কেনান উত্তর আরব এলাকায় সে সময় কোন সংগঠিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ছিল না এবং সেখানকার সমাজ-সংস্কৃতি তেমন কোন ধরনের উন্নতি লাভ করেনি। সেখানে ছিল কিছুসংখ্যক স্বাধীন উপজাতির বাস। তারা মাঝে মাঝে এক এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় গিয়ে বসবাস করতো। আবার কোন কোন উপজাতি বিভিন্ন এলাকায় স্থায়ী বসতি গড়ে তুলে নিজেদের ছোট ছোট রাষ্ট্রও গঠন করে নিয়েছিল। মিসরের পার্শ্ববতী এলাকায় বসবাসকারী এসব লোকের অবস্থা ছিল প্রায় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত স্বাধীন পাঠান উপজাতিদের মতো। এখানে হযরত ইউসুফ যে শিক্ষা প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন তাতে অবশ্যই অন্তরভুক্ত ছিল বেদুইন জীবনের সৎগুণাবলী এবং ইবরাহিমী পরিবারের আল্লাহমুখী জীবন চিন্তা ধর্মচর্চা। কিন্তু মহান আল্লাহ সমসাময়িক বিশ্বের সবচেয়ে সুসভ্য উন্নত দেশ অর্থাৎ মিসরে তাঁর মাধ্যমে যে কাজ নিতে চাচ্ছিলেন এবং জন্য যে পর্যায়ের জানাশোনা, অভিজ্ঞতা গভীর অন্তরদৃষ্টির প্রয়োজন ছিল তার বিকাশ সাধনের কোন সুযোগ বেদুইন জীবনে ছিল না। তাই আল্লাহ তাঁর সর্বময় ক্ষমতাবলে তাঁকে মিসরে রাজ্যের একজন বড় সরকারী কর্মচারীর কাছে পৌঁছিয়ে দিলেন। আর তিনি তাঁর অসাধারণ যোগ্যতা দেখে তাঁকে নিজের গৃহ ভূসম্পত্তির দেখাশোনা পরিচালনার একচ্ছত্র কর্তৃত্ব দান করলেন। এভাবে ইতিপূর্বে তাঁর যেসব যোগ্যতাকে কোন কাজে লাগনো হয়নি তা পূর্ণ বিকাশ লাভ করার সুযোগ পেয়ে গেলো। ছোট্ট একটি জমিদারী পরিচালনার মাধ্যমে তিনি যে অভিজ্ঞতা লাভ করলেন তা আগামীতে একটি বড় রাষ্ট্রের আইন শৃংখলা ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য প্রয়োজন ছিল আয়াতে বিষয়টির দিকে ইংগিত করা হয়েছে
যে মহিলাটির ঘরে সে ছিল সে তাকে নিজের দিকে আকর্ষণ করতে থাকলো এবং একদিন সে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললো, “চলে এসো ইউসুফ বললো, “আমি আল্লাহর আশ্রয় নিচ্ছি, আমার রব তো আমাকে ভালই মর্যাদা দিয়েছেন (আর আমি কাজ করবো!) ধরনের জালেমরা কখনো কল্যাণ লাভ করতে পারে না৷শেষ পর্যন্ত ইউসুফ সে আগেপিছে দরজার দিকে দৌড়ে গেলো এবং সে পেছন থেকে ইউসুফের জামা (টেনে ধরে) ছিঁড়ে ফেললো৷ উভয়েই দরজার ওপর তার ওপর তার স্বামীকে উপস্থিত পেলো৷ তাকে দেখতেই মহিলাটি বলতে লাগলো, “তোমার পরিবারের প্রতি যে অসৎ কামনা পোষণ করে তার কি শাস্তি হতে পারে ? তাকে কারগারে প্রেরণ করা অথবা কঠোর শাস্তি দেয়া ছাড়া আর কি শাস্তি দেয়া যেতে পারে ইউসুফ বললো, “ সে- আমাকে ফাঁসাবার চেষ্টা করছিল৷” “মহিলাটির নিজের পরিবারের একজন (পদ্ধতিগত) সাক্ষ দিল,  “যদি ইউসুফের জামা সামনের দিক থেকে ছেঁড়া থাকে তাহলে মহিলাটি সত্য কথা বলেছে এবং সে মিথ্যুক .আর যদি তার জামা পেছনের দিক থেকে ছেঁড়া থাকে তাহলে মহিলাটি মিথ্যা কথা বলেছে এবং সে সত্যবাদী৷এর মানে হচ্ছে, ইউসুফের কাপড় যদি সামেনর দিক থেকে ছেঁড়া থাকে তাহলে ইউসুফের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল এবং মহিলাটি নিজেকে বাঁচাবার জন্য ধস্তাধস্তিতে লিপ্ত হয়েছিল, এটা হবে তার স্পষ্ট আলামত কিন্তু যদি ইউসুফের কাপড় পেছনের দিক থেকে ছেঁড়া থাকে তাহলে স্পষ্ট বুঝতে হবে, মহিলাটি তার পেচনে লেগেছিল এবং ইউসুফ তার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল ছাড়াও আর একটি বাস্তব সাক্ষও সাক্ষের মধ্যে লুকিয়েছিল সেটি হচ্ছে, সাক্ষী শুধুমাত্র ইউসুফ আলাইহিস সালামের কাপড়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়েছে থেকে একথা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, মহিলাটির শরীরে বা পোশাকে আদতে বল প্রয়োগের কোন আলামতই ছিল না অথচ যদি এটা বলাৎকারজনিত মামলা হতো তাহলে মহিলাটির শরীরে পোশাকে এর পরিষ্কার আলামত দেখা যেতোস্বামী যখন দেখলো ইউসুফের জামা পেছনের দিক থেকে ছেঁড়া তখন বললো, “এসব তোমাদের মেয়েলোকদের ছলনা৷ সত্যিই বড়ই ভয়ানক তোমাদের ছলনাশহরের মেয়েরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলো৷, “আযীযের স্ত্রী তার যুবক গেলামের পেছনে পড়ে আছে, প্রেম তাকে উন্মদ করে দিয়েছে৷ আমাদের মতে সে পরিষ্কার ভুল করে যাচ্ছে৷” সে যখন তাদের শঠতাপূর্ণ কথা শুনলো তখন তাদেরকে ডেকে পাঠালো৷ তাদের জন্য হেলান দিয়ে বসার মজলিসের আয়োজন করলো৷  খাওয়ার বৈঠকে তাদের সবার সামনে একটি করে ছুরি রাখলো৷ (তারপর ঠিক সেই মুহূর্তে যখন তারা ফল কেটে কেটে খাচ্ছিল) সে ইউসুফকে তাদের সামনে বের হয়ে আসার ইশারা করলো৷ যখন মেয়েদের দৃষ্টি তার ওপর পড়লো, তার বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলো এবং নিজের হাত কেটে ফেললো৷ তারা বললো, “আল্লাহর কী অপার মহিমা! এতো মানুষ নয়, এতো এক মহিমান্বিত ফেরেশ্তা৷অর্থাৎ এমন মজলিস যে মজলিসে মেহমানদের হেলান দিয়ে বসার জন্য বালিশ সাজানো ছিল মিসরের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার থেকেও এর সত্যতার প্রমাণ পাওয়া গেছে দেখা গেছে তাদের মজলিসে মহফিলে বালিশের ব্যাপক ব্যবহার ছিলআযীযের স্ত্রী বললো, “দেখলে তো! হলো সেই ব্যক্তি যার ব্যাপারে তোমরা আমার বিরুদ্ধে নিন্দাবাদ করতে৷ অবশ্যই আমি তাকে প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সে নিজেকে রক্ষা করেছে৷ যদি সে আমার কথা না মেনে নেয় তাহলে কারারুদ্ধ হবে এবং নিদারুণভাবে লাঞ্ছিত অপমানিত হবে৷এ থেকে তদানীন্তন মিসরের উচ্চ অভিজাত সমাজে নৈতকতার অবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকেছিল তা অনুমান করা যায় একথা সুস্পষ্ট, আযীযের স্ত্রী যেসব মহিলাকে দাওয়াত দিয়েছিল তারা নিশ্চয়ই নগরের আমীর-উমরাহ বড় বড় সরকারী কর্মকর্তাদের বেগমরাই ছিল এসব উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ভদ্র মহিলার সামনে সে নিজের প্রিয় যুবককে পেশ করলো তার সুদর্শন যৌবনোদ্ভিন্ন দেহ সুষমা দেখিয়ে সে তাদের কাছ থেকে স্বীকৃতি আদায় করতে চাইলো যে, এমন সুন্দর যুবকের জন্য যদি আমি পাগল না হয়ে যাই তাহলে আর কী হবো! তারপর এসব পদস্থ ব্যক্তিবর্গের স্ত্রী-কন্যারা নিজেদের কাজের মাধ্যমে যেন একথার সত্যতা প্রমাণ করলো যে, সত্যিই ধরনের অবস্থায় তাদের প্রত্যেকেই ঠিক তাই করতো যা আযীযের স্ত্রী করেছে আবর অভিজাত মহিলাদের ভরা মজলিসে মেজবান সাহেবা প্রকাশ্যে সংকল্প ঘোষণা করতে একটুও লজ্জা অনুভব করলো না যে, যদি সুন্দর যুবক তার কামনার ক্রীড়নক হতে রাযি না হয় তাহলে সে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেবে ইউসুফ বললো, “হে আমার রব ! এরা আমাকে দিয়ে যে কাজ করাতে চাচ্ছে তার চাইতে কারাগারই আমার কাছে প্রিয়! আর যদি তুমি এদের চক্রান্ত থেকে আমাকে না বাঁচাও তাহলে আমি এদের ফাঁদে আটকে যাবো এবং অজ্ঞদের অন্তরভুক্ত হবে৷