মহান আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন

الذين يقيمون الصلوة ومما رزقنهم ينفقون- اولئك هم المومنون حقا- لهم درجت عند ربهم ومغفرة ورزق كريم-

‘‘যারা নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে ব্যয় করে। তারা হল সত্যিকার ঈমানদার। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মান জনক রিযিক। [ সূরা আনফাল-৩-৪]

Pages

হাদিস এবং সুন্নাহ্ কী?

 হাদিস এবং সুন্নাহ্ কী?


মানুষের হিদায়াত বা পথ প্রদর্শনের জন্যে আল্লাহ তা’য়ালা মুহাম্মদ সা.-কে রসূল নিযুক্ত করেন। আর হিদায়াতের গাইডবুক হিসেবে তাঁর প্রতি নাযিল করেন আল কুরআন। কুরআন মানুষকে পড়ে শুনানো এবং বুঝিয়ে দেবার দায়িত্বও তিনি রসূলের উপর অর্পন করেন। সুতরাং কুরআন বুঝিয়ে দেবার জন্যে কুরআনের ব্যাখ্যা দান করাও ছিলো রসূলের উপর আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব। আর ব্যাখ্যা তিনি নিজের মনগড়াভাবে দেননি। বরং সেটাও দিয়েছেন আল্লাহর নির্দেশেরই আলোকে। এ কারণে রসূলের উপর কুরআন ছাড়াও আরেক ধরণের অহি নাযিল করেছেন।
মানুষ কিভাবে কুরআন অনুযায়ী জীবন যাপন করবে? কিভাবে সে তার ব্যক্তি জীবন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল দিক ও বিভাগ পরিচালনা করবে? আর কিভাবেই বা সে কুরআনের আদর্শে নৈতিক কাঠামো এবং সমাজ কাঠামো গড়ার চেষ্টা সাধনা করবে? এ সকল বিষয়েই রসূলুল্লাহ সা. নির্দেশনা দান করে গেছেন। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় এসব বিষয়ে কর্মনীতি কর্মপন্থা অবলম্বন করে বাস্তবে দেখিয়ে গেছেন। শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। জানিয়ে দিয়ে গেছেন। রসূল হিসেবে আল্লাহর দীন অনুযায়ী জীবন যাপন করবার জন্যে তিনি কুরআন ছাড়াও যে জ্ঞান দান করে গেছেন, যেসব কর্মনীতি কর্মপন্থা বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন এবং বাস্তবে যেসব শিক্ষা প্রদান করে গেছেন, তাই হলো সুন্নতে রসূল যা হাদিস হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে। কুরআনে অবশ্য সুন্নতে রসূল বা হাদিসে রসূলকে ‘হিকমাহ’ বলা হয়েছে। আর এই হিকমাহও যে আল্লাহর নিকট থেকে নাযিল হয়েছে, সে কথা স্পষ্টভাবেই বলে দেয়া হয়েছে :
وَأَنزَلَ اللَّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُ ۚ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا .
অর্থ: (হে নবী!) আর আল্লাহ তোমার প্রতি আল কিতাব এবং হিকমাহ নাযিল করেছেন। তাছাড়া তুমি যা জানতে না, তা তোমাকে শিখিয়েছেন। আসলে তোমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ বিরাট। [আল কুরআন, সূরা আন নিসা : আয়াত ১১৩]
তাছাড়া নবী করিম সা. নিজেই বলে গেছেন :
اَلاَ اِنِّىْ اُوْتِيْتُ الْقُرْاٰنُ وَمِثْلَهُ مَعَه .
অর্থ: জেনে রাখো, আমাকে আল কুরআন দেয়া হয়েছে আর সেই সাথে দেয়া হয়েছে অনুরূপ আরেকটি জিনিস। [আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ]
এই ‘হিকমাহ’ এবং কুরআনের অনুরূপ জিনিসটা কি? এ যে কুরআন থেকে পৃথক জিনিস, তাতো  উপরোক্ত আয়াত এবং হাদিসটি থেকে সুস্পষ্টভাবেই বুঝা যাচ্ছে। মূলত এই হলো ‘সুন্নতে রসূল’। এই সুন্নাহ্ রসূলুল্লাহ্ সা. তাঁর কথা, কাজ, সমর্থন ও অনুমোদনের মাধ্যমে উম্মাহকে জানিয়ে, বুঝিয়ে এবং শিখিয়ে দিয়ে গেছেন, যা আমাদের কাছে এখন হাদিস আকারে সুসংরক্ষিত হয়ে আছে।

 হাদিস কাকে বলে?


‘হাদিস’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ- কথা, নতুন কথা, বাণী, সংবাদ, বিষয়, অভিনব ব্যাপার ইত্যাদি।
পারিভাষিক ও প্রচলিত অর্থে- নবী করিম সা.-এর কথা, কাজ, সমর্থন, আচরণ এমনকি তাঁর দৈহিক ও মানসিক কাঠামো সংক্রান্ত বিবরণকে হাদিস বলে। [মুকাদ্দমা সহীহ আল বুখারি; মুকাদ্দমা মিশকাতুল মাসাবীহ]
পূর্বকালে সাহাবায়ে কিরামের কথা, কাজ ও সমর্থনকেও হাদিস বলা হতো। অবশ্য পরে উসূলে হাদিসে তাঁদের কথা, কাজ ও সমর্থনের নাম দেয়া হয়েছে ‘আছার’ এবং ‘হাদিসে মওকূফ’। তাবেয়ীগণের কথা, কাজ ও সমর্থনের নাম দেয়া হয়েছে ‘ফতোয়া’। [ইবন হাজর আসকালানী : তাওজীহুন নযর]

 কুরআন ও হাদিসের মধ্যে পার্থক্য


হাদিস যদিও রসূলুল্লাহ সা. অহির মাধ্যমে লাভ করেছেন, তবু হাদিস কুরআন বা কুরআনের অহির সমতুল্য নয়। কুরআন এবং হাদিসের মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্যসমূহ বিদ্যমান :
০১.    অক্ষরে অক্ষরে কুরআনের ভাষা এবং বক্তব্য দুটোই আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। পক্ষান্তরে হাদিসের বক্তব্য বা বিষয়বস্তুই কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে লাভ করেছেন, আর ভাষা দিয়েছেন রসূল সা. নিজে।
০২.    কুরআন কেবলমাত্র জিবরিল আমিনের মাধ্যমে নাযিল হয়েছে। অথচ হাদিস ইলহাম এবং স্বপ্নযোগেও রসূল সা. লাভ করেছেন।
০৩.    কুরআন উম্মুল কিতাবে লওহে মাহফুয বা সুরক্ষিত ফলকে সংরক্ষিত। সেখান থেকেই নাযিল হয়েছে। কিন্তু হাদিস লওহে মাহফুযে সংরক্ষিত নয়।
০৪.    কুরআন পাঠ করা ইবাদত। প্রতিটি অক্ষর তিলাওয়াত করার জন্যে দশটি সওয়াব পওয়া যায়। হাদিস তিলাওয়াত ইবাদত নয়।
০৫.    কুরআন তিলাওয়াত ছাড়া নামায হয়না, কিন্তু হাদিসের অবস্থা তা নয়।
০৬.    কুরআন রসূলের উপর অবতীর্ণ আল্লাহর এক আশ্চর্য মু’জিযা। এর মতো বাণী তৈরি করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু হাদিসের অবস্থা তা নয়।
০৭.    কুরআন সরাসরি আল্লাহর ভাষা ও বক্তব্য। কিন্তু হাদিস মানুষের (নবীর) তৈরি ভাষা ও কথা।
০৮.    কুরআন অমান্যকারী কাফির হয়ে যায়। কিন্তু বিশেষ যুক্তিতে কেউ কোনো হাদিস অমান্য করলে তাকে কাফির বলা যায়না।
০৯.    কুরআন সংরক্ষণ করার দায়িত্ব আল্লাহ নিজে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু হাদিস কেবল মানুষের বর্ণনার ভিত্তিতেই সংরক্ষিত।