মহান আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন

الذين يقيمون الصلوة ومما رزقنهم ينفقون- اولئك هم المومنون حقا- لهم درجت عند ربهم ومغفرة ورزق كريم-

‘‘যারা নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে ব্যয় করে। তারা হল সত্যিকার ঈমানদার। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মান জনক রিযিক। [ সূরা আনফাল-৩-৪]

Pages

স্রষ্টার অস্তিত্বের স্বপক্ষে তিনটি স্বতন্ত্র প্রমাণ

স্রষ্টার অস্তিত্বের স্বপক্ষে তিনটি স্বতন্ত্র প্রমাণ


প্রফেসর রিচার্ড ডকিন্স সম্ভবত সমসাময়িক সময়ের সবচেয়ে জ্ঞানী ও যুক্তিবাদী নাস্তিক – নিদেনপক্ষে তার অনুসারীদের তেমনই ধারণা। সাদা চামড়ার বৃটিশ ও অক্সফোর্ড প্রফেসর হওয়ার সুবাদে তার বাণীকে কোন রকম সংশয়-সন্দেহ ছাড়া গডের বাণীর মতই বিশ্বাস করা হয়। অথচ তার লেখাতে এখন পর্যন্তও এমন কিছু উপস্থাপন করা হয়নি যার দ্বারা প্রমাণ হয় যে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা বলে কিছু নাই বা থাকতে পারে না। যদিও এই পৃথিবীর যে কোন মানুষের কাছে থেকে এমন কিছু আশা করাটা আমাদের দৃষ্টিতে নিতান্তই হাস্যকর শুনায় তথাপি তার অন্ধ অনুসারীরা তো আর সেভাবে ভাবেন না। তার অন্ধ অনুসারীদের বিশ্বাস অনুযায়ী প্রফেসর ডকিন্স সত্যি সত্যি এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার অনস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন! নইলে তার বাণীকে সত্য ধরে নিয়ে ধর্মের মতো করে প্রচার করা হবে কেন। যাহোক, এই মহাবিশ্বের যে একজন অদৃশ্য স্রষ্টা আছে তার স্বপক্ষে তিনটি অখণ্ডনীয় যুক্তি এই লেখাতে উপস্থাপন করা হবে।

প্রাকৃতিক মহাবিশ্ব:

 সাধারণ বোধ অনুযায়ী ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন গ্রহ-নক্ষত্র ও মিলিয়ন মিলিয়ন প্রজাতি তথা প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগত সহ এই প্রাকৃতিক মহাবিশ্ব এমনি এমনি সৃষ্টি হতে পারে না। শূন্য থেকে তো দূরে থাক এমনকি সবকিছু ব্যবহার করেও এই মহাবিশ্বের মতো ক্ষুদ্র একটি মডেলও কেউ তৈরী করে দেখাতে পারবে না। নাস্তিকরা নিদেনপক্ষে এই মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র একটি মডেল তৈরী করে দেখাতে পারলেও শুরু করার মতো তাদের কিছু একটা থাকতে পারতো, যদিও তাতে প্রমাণ হবে না যে এই মহাবিশ্বের কোন স্রষ্টা নাই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সেটাও তারা পারবেন না। ফলে যারা বিশ্বাস করেন যে, তারা নিজেরা সহ এই প্রাকৃতিক মহাবিশ্ব এমনি এমনি সৃষ্টি হয়েছে তারাই হচ্ছে প্রকৃত অন্ধ-বিশ্বাসী। এই ধরণের অন্ধ-বিশ্বাসের আসলে কোন তুলনাই হয় না। মোদ্দা কথা হচ্ছে প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগত সহ এই প্রাকৃতিক মহাবিশ্ব যেহেতু এমনি এমনি সৃষ্ট হতে পারে না সেহেতু এই মহাবিশ্বের একজন স্রষ্টা থাকতেই হবে। এটি একটি অখণ্ডনীয় যুক্তি।
আর সংজ্ঞা অনুযায়ী স্রষ্টার যেহেতু স্রষ্টা থাকতে পারে না সেহেতু “স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করেছে?” প্রশ্নটি একেবারেই অবান্তর শুনায়।

অসংখ্য নবী-রাসূল: 

মানব জাতির ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব নিজেদেরকে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার মেসেঞ্জার তথা নবী-রাসূল বলে দাবি করেছেন। স্রষ্টা বলে কিছুই না থাকলে কেউ স্রষ্টা থেকে মেসেজ পাওয়ারও দাবি করতে পারেন না। এটি স্রেফ কোন উটকো দাবিও নয়। যেমন মুহাম্মদ (সাঃ) দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁর দাবিকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর পূর্বের মেসেঞ্জাররাও একই পথ অনুসরণ করেছেন। তাঁদের দাবি থেকে মাত্র দুটি উপসংহারে পৌঁছা যেতে পারে:
(ক) তাঁরা সবাই মিথ্যাবাদী ছিলেন যেটা বিশ্বাস করা প্রায় অসম্ভব। বরঞ্চ তাঁদের সবাইকে মিথ্যাবাদী হিসেবে বিশ্বাস করাটাই হচ্ছে একটি অন্ধ-বিশ্বাস ও আত্মপ্রতারণা।
(খ) তাঁদের মধ্যে একজনও যদি সত্যবাদী হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে এই মহাবিশ্বের যে একজন স্রষ্টা আছে তাতে সংশয়-সন্দেহের কোনই অবকাশ নেই।

আল-কুরআন: 

কুরআন নামক গ্রন্থটি যে কোন মানুষের নিজস্ব বাণী হতে পারে না – তার স্বপক্ষে বেশ কিছু যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। যে কেউ নিরপেক্ষ মন-মানসিকতা নিয়ে কুরআন অধ্যয়ন করলে এই সিদ্ধান্তে উপণীত হওয়া উচিত যে, কুরআনের মতো একটি গ্রন্থ লিখা মানুষের পক্ষে সত্যি সত্যি অসম্ভব। এমনকি কুরআনের ভাষা ও বাচনভঙ্গিও অন্য যে কোন গ্রন্থ থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। তাছাড়া কুরআনের মধ্যে যে তথ্য আছে তার সঠিক ব্যাখ্যা এখন পর্যন্তও কেউ দিতে পারেনি। কেউ বলে কুরআন হচ্ছে মুহাম্মদের বাণী। কেউ বলে ইহুদী রাবাইদের বাণী। কেউ বলে খ্রীষ্টান পাদ্রীদের বাণী। কেউ বলে স্যাটানের বাণী। কেউ বলে মৃগী রোগীর বাণী। কেউ বা আবার বলে মুহাম্মদের কোন এক সেক্রেটারির বাণী। তার মানে কুরআন বিরোধীরাই এখন পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে ঐক্যমতে পৌঁছতে সক্ষম হয়নি। সকালবেলা কুরআনকে মুহাম্মদের বাণী বলে দাবি করা হয়। ভাল কথা। কিন্তু দুপুর হতে না হতে মত পাল্টে যায়! তখন কুরআন হয়ে যায় ইহুদী রাবাইদের বাণী। বিকালবেলা হয় খ্রীষ্টান পাদ্রীদের বাণী। ডিনারের সময় হয় স্যাটানের (শয়তানের) বাণী। মাঝরাতে আবার হয়ে যায় মৃগী রোগীর বাণী। এ নিয়ে সারারাত জেগে কোন কুল-কিনারা না পেয়ে ভোরবেলা হতাশ হয়ে হয়ত বলা হয় কুরআন আসলে উপরোল্লেখিত সবারই বাণী! প্রকৃত মৃগী রোগী যে কে বা কারা তা সাধারণ বোধসম্পন্ন যে কারো বোঝার কথা। দশজন কুরআন বিরোধীকে যদি আলাদাভাবে মন্তব্য করতে বলা হয় সেক্ষেত্রে তারা হয়ত দশ রকম উপসংহারে পৌঁছবে। মানব জাতির ইতিহাসে দ্বিতীয় কোন গ্রন্থ সম্পর্কে এরকম অদ্ভুত ও বিক্ষিপ্ত মতামত নেই। কুরআন বিরোধীরাই আসলে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, কুরআন কোন মানুষের বাণী নয়। কিন্তু একই কথা কুরআনে বিশ্বাসীরা বলতে গেলেই দোষ!
এবার ট্রিলিয়ন ডলার প্রশ্ন হচ্ছে এই মহাবিশ্বের যে স্রষ্টা নাই তার স্বপক্ষে নাস্তিকদের কাছে অখণ্ডনীয় কোন যুক্তি বা প্রমাণ আছে কিনা? ওয়েল, তাদের কাছে প্রমাণ থাকার প্রশ্নই ওঠে না। আর এ কারণেই তারা বিজ্ঞানের মধ্যে মাথা গোঁজা শুরু করেছেন। বিজ্ঞান-ই হচ্ছে তাদের গড! বর্তমান যুগের শিশুদের কাছে যেটি নিছকই একটি টুল, অক্সফোর্ড প্রফেসর ডকিন্সের মতো নাস্তিকদের কাছেও সেটিই হচ্ছে গড! অধিকন্তু, বিজ্ঞান যেহেতু একটি পরিবর্তনশীল বিষয়, বিশেষ করে প্রোবাবিলিস্টিক ক্ষেত্রে, সেহেতু বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে দর্শনভিত্তিক কোন বিষয়ে অখণ্ডনীয় কোন তত্ত্ব দাঁড় করাতে যাওয়াটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় অপবিজ্ঞান।

স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে যারা প্রমাণ চায়…

আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে যে কেউ স্বীকার করতে বাধ্য যে, এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা সম্পর্কীত প্রশ্নটি (স্রষ্টা আছে কি নেই) যেমন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেমনি আবার এই প্রশ্নের উত্তরও সবেচেয়ে জটিল। আর তা-ই যদি হয় তাহলে একই সাথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে সহজ-সরল ও প্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্নের উত্তর জানা অতি আবশ্যক। অন্যথায় সারা জীবন চড়কীর মতো ঘুরপাক খেতে হবে।
যাদের ভিডিও গেমস খেলার অভিজ্ঞতা আছে তারা নিশ্চয় অবগত যে, কিছু কিছু গেমসে খুব সহজ লেভেল থেকে শুরু করে একাধিক লেভেল থাকে। প্রথম লেভেল অতিক্রম করতে না পারলে দ্বিতীয় লেভেলে যাওয়া যায় না। লেভেল যতই বাড়তে থাকে ততই কঠিন হয়। এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার ব্যাপারটাও কিছুটা মাল্টি-লেভেল গেমসের মতো – যেখানে স্রষ্টা সম্পর্কীত প্রশ্নটি হচ্ছে সর্বশেষ লেভেল। ফলে যারা স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে ‘প্রমাণ’ চায় তাদেরকে আগে প্রাথমিক তিনটি লেভেল অতিক্রম করা উচিত-
লেভেল-১: স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে ‘প্রমাণ’ বলতে আসলে কী বুঝানো হয়? কী ধরণের ‘প্রমাণ’ দেখালে তারা স্রষ্টার অস্তিত্বকে মেনে নেবেন এবং কেন?
লেভেল-২: বিশ্ববাসীর কাছে তারা নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারবেন কিনা?
লেভেল-৩: কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছু লোক একজন মানুষ অথবা বস্তুকে দেখিয়ে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা বলে দাবি করেছে। স্বচক্ষে দেখেও তাকে স্রষ্টা হিসেবে মেনে না নেওয়ার পেছনে যৌক্তিক ও নৈব্যক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে।
এই তিনটি লেভেল অতিক্রম না করে ইসলামে বিশ্বাসীদের কাছে স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে প্রমাণ চাওয়া আর মাল্টি-লেভেল গেমসের ক্ষেত্রে প্রাথমিক লেভেল অতিক্রম না করে সর্বশেষ লেভেলে যাওয়ার চেষ্টা করা একই কথা। এমনকি অসততাও বটে।